পৃষ্ঠা গুলি দেখুন

দুর দেশের খবর জানার মন্ত


দুর দেশের খবর জানার মন্ত
***দুর দেশের খবর জানাঃ *****
দুর দেশের খবর জানাঃ “আগম নিগম কী খবর লগাবে
সোহহং পারব্রহ্ম কো নমস্কার।” বিধিঃ অনেক
তান্ত্রিক আছে যারা মনে করে যদি কোন ভাবে এক
স্থানে বসে অন্য স্থানের খবর বলে দেওয়া যায়
তাহলে কেমন হয়। অনেক তান্ত্রিক অবশ্য বিভিন্ন
সাধনা দ্বারা এবং কেউ কেউ শুধু মাত্র অনুমান ও
অভিজ্ঞতার দ্বারা অনেক সময় নির্ভূল তথ্য দিয়ে
থাকে যা অনেকে জ্বিন সাধনা বলে চালিয়ে দেয়,
আসলে একজন জ্বিন সাধক কোথাও আসর বসিয়ে
অন্যের খবর বলার মত কাজ করে পেট চালাবে না।
এটি একটি মিথ্যাকথা।। যা হোক আপনি যদি এমন
কাজটি করতে চান তবে উপরোক্ত মন্ত্রটি বিধি
পূর্বক কোন শুভক্ষণে শুরু করে একাধারে ৪০ দিন ২৫০
বার করে জপ করতে হবে। এরপর এটি সিদ্ধ হবে তখন
সাধক কোন সুদ্ধাশনে বসে চোখ বন্ধ করলেই তার
সামনে সে যা জানতে চায় তা দেখতে পাবে।

শিক্ষা থীদের নিদেশনা




শিক্ষা থীদের নিদেশনা
গভির রহস্যপূর্ন এই আত্নিক বিজ্ঞান শিক্ষা করিতে
শিক্ষার্থীর আত্নবিশ্বাস, স্থির সংকল্প, অধ্যবসায়
ও সহিঞ্চুতা থাকা আবশ্যক। যে কেহ এই কয়টি
মানষিক গুনের সাহায্য এই গুপ্ত বিদ্দ্যা ও শাখা
বিজ্ঞান সমূহ হাতে কলমে শিক্ষা করিতে সমর্থ।
উক্ত গুণগুলোর সহায়তায় যে কেবল এই বিদ্দ্যা
চর্চ্চায় সাফল্য লাভ করা যায়, তাহা নয়,
যথোপযুক্তরুপে প্রযুক্ত হইলে উহারা প্রত্যেক গৃহীত
কার্যেই মানুষকে সিদ্ধি দান করিয়া থাকে।
ফলতঃ মানুয়ের কর্ম্ম-জীবনের সাফল্য সমধিক
পরিমাণে উহাদের উপরেই নির্ভর করে।
শিক্ষার্থীর সর্ব্বাগ্রে চাই আত্ন-বিশ্বাস। সে এই
বিদ্দ্যা শিক্ষা করিয়া কৃতকার্য্য্  হইতে সম্পূর্ন
সমর্থ, এরুপ স্থির ধারনাকেই “আত্ন-বিশ্বাস” বা
আত্ন-প্রত্যয় বলে। আত্ন-বিশ্বাসি ব্যক্তিগণ অত্যন্ত
কঠিন কার্যেও সিদ্ধিলাভ করিতে পারেন। আর
স্বীয় ক্ষমতার প্রতি আস্থাশূন্য ব্যক্তি সহজ কার্যেও
সর্ব্বদা বিফলমনোরথ হয়। সংসারের সকল কর্ম্ম
অপেক্ষা নিদ্রিত মনঃশক্তিকে জাগ্রত করিতে
সর্ব্বাপেক্ষা অধিক আত্ন-বিশ্বাসের প্রয়োজন।
এজন্য তাহাকে স্বীয় ক্ষমতার প্রতি দৃঢ়রূপে
আস্থাবান হইয়া শিক্ষায় প্রবৃত্ত হইতে হইবে। তজ্জন্য
তাহাকে এরুপ একটি ধারনা হৃদয়ে সর্ব্বদা বদ্ধমুল
রাখিতে হইবে যে, যখন সহস্র সহস্র ব্যক্তি এই
বিজ্ঞান শিক্ষা করিয়া সফলকাম হইয়াছে তখন সেও
ইহা শিক্ষা করিতে পারিবে। দৃঢ় আত্ন-প্রত্যয়ের
সহিত সে এই উপদেশ গুলির প্রতিও বিশ্বাস স্থাপন
করিবে, অন্ন্যথায় তাহার সিদ্ধি লাভের আশা অতি
অল্প। চিকিৎসক প্রদত্ত কোন ঔষধের প্রতি রোগীর
বিশ্বাস না থাকিলে যেমন উহার সাহায্য রোগীর
রোগ আরাগ্য হয় না। সেইরুপ এই উপদেশ গুলির প্রতি
আস্থা শূন্য হইলে এই বিদ্দ্যা শিক্ষায় সেও সাফল্য
লাভ করিতে পারিবে না।
তৎপরে সিদ্ধি লাভের নিমিত্ত তাহার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা
চাই।সংকল্পের দৃঢ়তাই সিদ্ধি লাভের আদি কারণ।
স্থির সংকল্প ব্যতীত কেহ কখনও এই অদ্ভুত ক্ষমতা
লাভ করিতে সমর্থ হয় না। দুই সপ্তাহে হউক, দুই মাসে
হউক অথবা অপেক্ষাকৃত অধিক সময়েই হউক, যে
পর্যুন্ত তাহার অভীষ্ট সিদ্ধি না হইবে, তদবধি সে
কখনও সংকল্প ভ্রষ্ট হইবে না।এ বিষয়ের কিছু, ও
বিষয়ের কিছু শিক্ষা করা যাহাদের স্বভাব এবং
যাহারা একটি কার্য্য আরম্ভ করিয়া উহার সুসম্পন্ন
না হইতেই অপর বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে, তাহারা এই
সকল গুপ্ত বিজ্ঞান শিক্ষার উপযুক্ত পাত্র নহে।
অতএব, যদি সে এই অদ্ভুদ রহস্যপূর্ন বিষয়টি শিক্ষা
করিতে আন্তরিক অভিলাষী হইয়া থাকে, তবে যে
পর্যুন্ত এই শক্তি তাহার আয়ত্তাধীন না হয়, ততদিন
সে, “নিশ্চিয়ই সিদ্ধি লাভ করিব” বলিয়া দৃঢ়
প্রতিজ্ঞ থাকিবে।
তৎপরে তাহার অধ্যবসায় ও সহিঞ্চুতা অবশ্যক। এই
কর্ম্মময় সংসারে এমন কার্য্য অতি বিরল যাহা
অধ্যবসায় ও সহিঞ্চুতা বলে সম্পন্ন হয় না। একটি
কার্য্য প্রথমে যত কঠিন বলিয়াই বোধ হউক, অধ্যবসায়
ও সহিঞ্চুতার সহিত চেষ্টা করিলে উহা নিশ্চয়
সুসম্পন্ন করা যায়। এই বিষয়গুলো এখানে যতদুর সম্ভব
সরল ভাষায় লিখিত হইয়াছে, এবং আমি আশা করি
যে, শিক্ষার্থী এই নিয়ম-প্রনালীগুলো যথাযথরুপে
অনুসরণ করিলে, সে প্রথম বা দ্বিতীয় চেষ্টাতেই
“শারীরিক পরীক্ষাগুলিতে” কৃতকার্য্য হইবে।আর
যদি সে শিক্ষার প্ররাম্ভে উহাতে দুই-একবার
অকৃতকার্য্য হয়, তথাপি নিরাশ হইয়া চেষ্টা
পরিত্যাগ করিবে না। বরং ধৈর্য্যবলন পূর্ব্বক দ্বিগুন
উৎসাহের সহিত পূনঃ পূনঃ চেষ্টা করিবে এবং
উহাতে সাফল্য লাভ না হওয়া পর্য্যন্ত চেষ্টায় বিরত
থাকিবে না।শিক্ষার্থী শুনীয়া হয়তো আশ্বস্ত হইবে
যে, আমার শিক্ষার প্রাককালীন কোন একটি
বিশেষ পরীক্ষায় আমি ৩৮ বার অকৃতকার্য্য হইয়াও
চেষ্টা পরিত্যাগ করি নাই। ফলতঃ অকৃতকার্য্যতা
হইতে অভিজ্ঞতা জন্মে এবং পরে সেই অভিজ্ঞতাই
মানুষকে যথাসময়ে সিদ্ধির পথে পরিচালিত করিয়া
থাকে।
শিক্ষার্থী আমার নিয়মগুলো সর্ব্বদা গোপনে
রাখিবে, এবং উহার এক বর্নও কাহারো অলস
অনুসন্ধিৎসা পরিতৃপ্তির জন্য কদাপি প্রকাশ করিবে
না।কারন ইহা একটি গোপন বিষয়।যে কোন গুপ্ত বিষয়
গোপনে রক্ষা করার উপরেই উহার কার্য্যকরী শক্তি
নির্ভর করে। এজন্য সাধু-সন্ন্যাসীদের নিকট হইতে
প্রাপ্ত কিম্বা স্বপ্নলব্ধ ঔষধাদির নাম লোকে
অপরের নিকট প্রকাশ করে না। ইহার কোন অংশ যদি
তাহার সহজ বোধ্য না হয়, তবে যে বরাবর আমার নিকট
মোবাইল বা মেইল যোগে যোগাযোগ করিবে।এবং
উহা সবিস্তরে বুঝিয়া লইবে।কিন্তু কখনও অপরকে
দেখাইয়া বুঝিয়া লইবার চেষ্টাও করিবে না।আর সে
কখনও উহার নিয়ম-প্রনালীগুলো অপর কোন ব্যক্তি বা
বই থেকে নিয়ম-প্রনালীর সহিত মিশ্রিত করিয়া
কার্য্য করিবে না।।আমি আমার সাইটের মাধ্যমে
এবং যোগাযোগের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট সময়ের
মধ্যে এই বিদ্দ্যা শিখাইয়া দিব বলিয়া প্রতিশ্রুতি
দিয়াছি।সুতারাং সে তাহার শিক্ষার ভার আমার
উপর সম্পূর্ণরুপে ন্যস্ত রাখিয়া নিশ্চিন্তে থাকিতে
পারে। যদি এই নিষেধ সত্ত্বেও কোন শিক্ষার্থী
ঐরুপ কোন কার্য্য করে, তবে তাহার কৃতকার্য্যতার
জন্য আমি দায়ী হইবো না।
পদার্থ বিজ্ঞানের ন্যায় ত্রাটক বিদ্যারো ভালো-
মন্দ দুইটা দিক আছে, এবং এই শক্তি লোকের উপকার
এবং অপকার দুই রকম কার্যেই নিয়োজিত হইতে
পারে। এই শক্তি দ্বারা মানুষের যেমন অশেষ প্রকার
মঙ্গল সাধন করা যায়, পক্ষান্তরে আবার উহার
সাহায্যে তাহার গুরুতর অনিষ্ঠও সাধিত হইতে পারে।
এই নিমিত্ত শিক্ষার্থীর নিকট আমার একটি বিশেষ
অনুরোধ এই যে, সে যেন মৎ প্রদত্ত এই উপদেশগুলোর
সাহায্যে শক্তি লাভ করিয়া কাদপি কাহারো
কোনরুপ অনিষ্ঠের চেষ্টা না পায়। যাহারা হীন
স্বার্থের  বাশবর্তী হইয়া এই শক্তির সাহায্যে
লোকের অনিষ্ট করিতে প্রবৃত্ত হয়, তাহারা সমাজের
পরম শত্রু। তাহারা মানুষের বিচারালয়ের কবল হইতে
মুক্তি পাইতে পারিলেও পরম নিয়ন্তার বিচারালয়ে
তাহাদের কৃত পাপের সমুচিত দন্ড পাইবে।
শিক্ষার্থী সদুদ্দেশ্যে অনুপ্রানিত হইয়া এই বিদ্দ্যা
চর্চ্চা রুপ সাধনায় প্রবৃত্ত হইলে, সে অল্পায়াসেই
সিদ্ধি লাভে সমর্থ হইবে। ইহাতে কোন সন্দেহ নাই।।

অদৃশ্য হবার কালো যাদু


অদৃশ্য হবার কালো যাদু মন্ত
ম ন্ত্রঃ বিসমিল্লাহির রহমানির
রহিম।
আলি বা তা ছা-
ইয়া ফা ওয়া হা;
ক্বাফ আলিফের হরফন-
জ্বীন সূরার বাদশা।
দোহাই কামাখ্যা মা;
কেউ যেনো না দেখে মোরে-
দেখলে মা পদ্মা হবে"
রাবণের মহা স্বচ্ছর.!
ডানে থাক ইসরাফিল-
বামে থাক মনাইসা মা"
শরীর এক্ষণি গায়েব হয়ে যা.!
বাক্যের দাপটে বাক্য লড়ে;
বাক্য যদি লড়ে চড়ে-
দোহায় মা পদ্মার মাথা জটা;
কার্তিকের পায়ে পড়ে।
নিয়মঃ মন্ত্র ১২০০ বার পাঠ করে
সিদ্ধি করে নিতে হবে। তারপর ১০৮
বার পাঠ করে প্রয়োগ করতে হবে।
নোটঃ আমার কাছে অনুমতি নিয়ে
কাজ করতে হবে। অন্যথায় বিপদের
সম্মুক্ষিন হতে হবে।।  আপনারা যারা এই অদৃশ্যা হবার
কালো যাদু বিদ্যা টি শিখতে চান আমাদের।সাথে যোগা যোগ করুন। ১০০%গ্যারান্টিতে পশীক্ষন দেয়া হয়
বিফলে পুরো মুলো ফেরত।

গুরুজীর ব্যক্তিগতো জীবনি একটি অধ্যায়


।গুরুজীর ব্যক্তিগত জিবনী হতে একটি
অধ্যায়
প্রচীনকাল থেকেই তিব্বতীয় তান্ত্রিক ও লামাদের
মধ্যে ‘তৃতীয় নেত্র’ জাগরণের সাধনা প্রচলিত আছে
এবং এখনও লামাদের মধ্যে এই বিচিত্র সাধনা পদ্ধতি
অনুসৃত হয়। নিচে এক পর্যটকের প্রত্যক্ষ করা এই
বিচিত্র সাধনা পদ্ধতির বিবরণ দেওয়া হল। তন্ত্র
সাধনায় ভারতের থেকে তিব্বত অনেকটা এগিয়ে
আছে। ওখানে লামাদের অদ্ভুত ক্ষমতা সত্যিই
আশ্চর্যের বিষয়। বেশ কিছু পর্যটক তাদের তিব্বত
যাত্রার বিবরণীতে অনেক প্রকার চমৎকার ঘটনার
বর্ণনা দিয়েছেন। তারা হাওয়ায় ভেসে বেড়াতে
পারে এমনও বলা হয়েছে। এছাড়া লামাদের যে সব
পরম্পরাগত নিয়মানুসারে বিচিত্র ও অদ্ভুত পদ্ধতিতে
উত্তরসূরী মনোনীত করা হয় তার কার্যক্রম বেশ রহস্যে
ঘেরা। এক লামার মৃত্যুর পর তার অনুগামী শিষ্যেরা
খোঁজ করত তিনি আবার কোথায় জন্ম নিয়েছেন। এই
কারণে সকল অবতারকেই লামা বলা হত। লামাদের
পুনর্জন্মে পূর্ণ বিস্বাস ছিল তাই তারা উক্ত লামার
মৃত্যুর পর তার পুনর্জন্ম কোথায় হয়েছে তা খুঁজে বার
করত। তিব্বতকে তন্ত্রানুগামী রহস্যময় দেশ বলা হয়।
তারী লামাদের বিবরণ এখনও তিব্বতে বিদ্যমান।
তিব্বতের লামরা, যারা বৌদ্ধধর্মাবলম্বী, তারা
পুনর্জন্মে বিশ্বাস রাখে। এর স্পষ্ট অর্থ হল যে তারা
আত্মার অস্তিত্বে বিশ্বাসী। এই প্রসঙ্গে একটি সত্য
ঘটনার উল্লেখ করছি।
মাথার উপর কান পর্যন্ত ঢাকা রোয়া ওঠা চামড়ার
টুপি ও গাঢ় লাল রঙের হাঁটু পর্যন্ত ঢাকা গাউন পরে
একটি উচু কালো টিলার উপর বসে সে ধ্যানমগ্ন ছিল।
তার ডানহাতে সোনা দিয়ে নক্সা করা একটি পবিত্র
চক্র বরাবর ঘুরছিল এবং তার মুখ থেকে খুব নিচু স্বরে
“ওঁং পদ্মে মণি হুম” ধ্বনি সর্বদা শোনা যাচ্ছিল। তার
ফর্সা, সংকুচিত চেহারা ছিল যথেষ্ট আকর্ষক। আমি
চুপ করে তার সামনে দাঁড়িয়েছিলাম। ধ্যানমগ্ন
অবস্থায় তাকে কিছু জিজ্ঞাসা করা উচিত নয় এই
ভেবে।
আমার এই দীর্ঘ রোমঞ্চকর যাত্রাপথে এমন বহু লামার
সাক্ষাৎ পেয়েছি, কিন্তু এই বৃদ্ধ লামার চেহারায় যে
তেজ দেখেছি এমনটা আর কারও মধ্যে দেখিনি।
যৌবনকালে সে নিশ্চয়েই অদ্ভুত ধরনের ছিল। আমি
কল্পনায় মগ্ন ছিলাম। কিন্তু দৃষ্টি বরাবর তার উপরেই
ছিল। তার হাতের চক্র একই গতিতে ঘুরে চলেছিল।
চক্রের ঘূর্ণন ও শব্দ পরিবেশকে অমৃতময় করে
রেখেছিল।
হঠাৎ ঐ বৃদ্ধ লামা আমার উপস্থিতির কথা বুঝতে
পারল। সে চোখ মেলে তাকাল। গম্ভীর স্বরে আমাকে
প্রশ্ন করল, ‘তাহলে তুমি এসে গেছ?’
কাল তুমি লমছোংগে ছিলে না? অপরিচিত ঐ
ব্যক্তির সঠিক প্রশ্ন শুনে আমি হতবার হলাম।
“গ্যাংটক থেকে রবিবার রওনা হয়েছে?”
আমি বিনয়ের সঙ্গে বললাম, “ আজ্ঞে হ্যাঁ”
সে এবার তার হাতের ঘূর্ণায়মান চক্রটি থামিয়ে
অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে সেটাকে চুম্বুন ও নমস্কার করে
নিজের চামড়ার থলির মধ্যে রেখে দিল। যন্ত্রটি
চক্রাকারে ঘোরানো লামাদের একটি পবিত্র কর্ম
অনেকটা আমাদের মালা জপ করার মতো। সেই উঁচু
টিলা থেকে নিচে নেমে সে ঠিক আমার সামনে
এসে দাঁড়াল। বলল, “তামাং গুম্ফা যাবে না?”
হ্যাঁ। আমি প্রত্যত্তরে বললাম।
সে এবার আগে আগে চলতে লাগল আর আমি তাকে
অনুসরণ করতে লাগলাম। এবার আমার পূর্ণ বিস্বাস হল
যে উক্ত লামা নিশ্চিত কোন সিদ্ধ পুরুষ। মানুষের
মনের কোন খবরই তার অজানা নয়। তাকে কিছু বলার
প্রয়োজনই হল না। সে সবই জানত। ঠিক এই রকমই
লমছোংগেও এক লামার দেখা মিলেছিল।
আমাকে দেখেই সে বলেছিল “তামাং গুম্ফা যাবে
না?”
আমি হ্যাঁ বলার পর সে ওখানে যাবার
পথ বাতলিয়ে দিয়েছিল।
সকাল সকাল উঠে ভাড়া করা খচ্চরের পিঠে আমি
রওনা হলাম। খচ্চরওয়ালা পাহাড়ের তলদেশে এসে
আমাকে বলল, “তামাং গুম্ফা এই পাহাড়েই আছে”
সে দুবার রাস্তার হদিশ দিয়ে চলে গেল, বলল, “উপরে
গিয়ে কাউকে জিজ্ঞাসা করে নেবে” আমি ও ঠিক
তেমনই করলাম। চড়াই পেরিয়ে অনেক সংকীর্ণ ও
কঠিন রাস্তা পাড়ি দিয়ে উপরে এসে সর্বপ্রথম সেই
লামাকেই নজরে এল, যে ধ্যানমগ্ন ছিল এবং এখন
আমাকে তার সাথে নিয়ে যাচ্ছে।
কিছুটা দূরে ঘূর্ণায়মান পথ ছিল। বড় বড় পাহাড়ের
পাশ দিয়ে ঘুরে ঘুরে ঐ পথ নিচে নেমে গেছে।
কিছুটা পথ পেরোতেই একটি বড় গোল গম্বুজওয়ালা
বাড়ি নজরে এল। এর কালো পাথর ও গঠনশৈলী বলে
দিচ্ছিল যে এটা একটিা গুম্ফা। হয়তো এটাই তামাং
গুম্ফা।
এর সংকীর্ণ পাথরের দরজা দিয়ে সে ভিতরে চলে
গেল। আমি তাকে অনুসরণ করলাম। আসলে এটা একটা
খব সুন্দর গুম্ফা। এখানে বেশ কিছু ভগবান বুদ্ধের মূর্তি
বানানো আছে।
যত্রতত্র অনেক লামাকে দেখতে পাওয়া গেল। তাদের
মাথায় কান পর্যন্ত ঢাকা টুপি, রং বেরং এর
গাউনপরা এবং প্রায় সবারই হাতে ধর্মচক্র ঘুরছে।
গুম্ফার মধ্যে থেকে “ওঁম্ পদ্মে মণি হুম” এর মিষ্টি
ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। ঐ লামা সোজা সামনের ঘরে
চলে গেল। সেই ঘরে ভগবান বুদ্ধের একটি সম্পূর্ন নগ্ন
মূর্তি রাখা আছে।
তার নিচে পাথরের কয়েকটি চেয়ার রাখা আছে।
একটি চেয়ারে তিনি নিজে বসে আমাকেও বসতে
ইঙ্গিত করলেন। আমি বসে পড়লাম।
“এটিই তামাং গুম্ফার” তিনি বললেন। জিজ্ঞেস
করলেন, “কার সাথে দেখা করতে চাও?”
ঐ গুম্ফার শান্ত, ধার্মিক ভাবগম্ভীর পরিবেশে আমি
মুগ্ধ হলাম। প্রশ্ন শুনে আমি যেন স্বপ্ন থেকে জেগে
উঠলাম। সঙ্গে সঙ্গে বললাম ‘লাম গুরু ছেরিংগের
সাথে। ওনার নিমন্ত্রণেই আমি এখানে আসতে সাহসী
হয়েছি।
উত্তর শুনে লামার মুখে চওড়া ব্যঙ্গ হাসি ফুটে উঠল।
হয়তো উনি আমাকে উপহাস করছিলেন। হঠাৎই আমি নত
মস্তক হয়ে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে বললাম “ আপনাকে
প্রণাম”
লামা ছেরিংগ হেসে উঠলেন। এবার বললেন “এ
যাত্রা তো খুবই দর্গম তবে বিশেষ কষ্ট হবে না।” আমি
বললাম, “না প্রভু এ যাত্রা তো দুর্গম বলে মনে হয়নি
বরং বেশ রুচিকর বলেই মনে হয়েছে।” “তোমার চিঠি
গ্যাংটক থেকে আমার লোক গিয়ে নিয়ে এসেছিল।
কিন্তু তুমি জানো কি যে ওটা ছিল সিকিম আর এটা
তিব্বত?”
আমি হেসে ফেললাম।
“তোমার সাথে ভিক্ষুণী মায়ার দেখা হয়েছে?”
আমি বললাম, হ্যাঁ পথে দেখা হয়েছিল। সে বলেছিল,
আপনি তামাংদেরই একজন। “এখানে আসার ইচ্ছা তো
তখনই ছিল, কিন্তু তোমার আসার কথা শুনে দেরি হল।
চিনারা এখানকার অনেক কিছুই তছনছ করে দিয়েছে।
এখন আমি ও এখান থেকে চলে যাব।”
আমি আমার সামনে গম্ভীর হয়ে বসা লামা গুরু
ছেরিংগকে অবাক হয়ে দেখতে লাগলাম। মনে প্রশ্ন
জাগলো, সর্বব্যাপী , সর্বত্র, অন্তর্যামী যিনি, যিনি
এতবড় একজন সাধক, সেই লামাগুরু কেন চিনাদের হাত
থেকে এই সব জিনিসকে বাঁচাতে পারলেন না? তন্ত্র
কি এতই দুর্বল?
আমাকে মৌন দেখে লামা গুরু ছেরিংগ বলে উঠলেন,
তুমি যা চিন্তা করছো তা আমি বুঝতে পারছি। হয়তো
পথেও এই কথা তোমার মনে এসেছিলো। কিন্তু দেখ
আমরা প্রকৃতির কাজে বাধা দেই না। দুশো বছর আগে
আমাদের গুরু বলেছিলেন, তিব্বতের উপর একদিন হলুদ
রাক্ষসের জোরদার আক্রমন হবে। আমাদেরকে এটা
প্রতিহত করতে হবে। কিন্তু েএর ফলে প্রকৃতির পূর্ভ
নির্ধারিত নিয়মকে ভাঙ্গতে হবে। একে আমরা কেমন
করে ভাঙ্গব? না তা সম্ভব নয়। এ সব আমাদের ভুগতেই
হবে। এটাই নিয়তি।
উনি উঠে গেলেন। হঠাৎ আমি চমকে গেলাম। ওখান
থেকেই চিৎকার করে বললেন ঠুনঠুন ! এ তুমি কী করছো?
এ কথা বলেই উনি খুব জোরে ছুটে গেলেন।
আমি এক মুহুর্তের জন্য অবাক হয়ে তখনি তার পিছু
ধাওয়া করলাম। হয়তো গুম্ফার মধ্যে কোন অঘটন ঘটে
গেছে। তার পূর্বাভাস পেয়েই লামা ছেরিংগ ছুটে
গেছেন। উনি সামনের দরজা খুলে উপরে উঠতে
লাগলেন।
ওটা একটি গলির দরজা। গলির শেষে সিঁড়ি। সিঁড়ির
উপর আবছা আলো। ওনার পিছনে আমিও ছিলাম।
সিঁড়িতে চড়তেই সামনে একটা ছোট সবুজ মাঠ দেখতে
পেলাম। চারিদিকে উচুভুমি দিয়ে ঘেরা।
লামা গুরু ছেরিংগ সামনে এগিয়ে গেলেন।
কিছু দুর থেকে আমি দেখলাম একটা নিম গাছের
নিচে বেশ বড় জায়গা ঘিরে আগুনের বেষ্টনী জ্বলছে
আর তার উপরে একটা কড়াই চড়ানো আছে। ঐ কড়াইতে
অজানা কোন বস্তু ফুটছে। নিম গাছের সাথে একটা
চোদ্দ পনের বছরের ছেলেকে বেঁধে রাখা হয়েছে।
তার হাত পা পিছমোড়া করে বাঁধা। পা থেকে কোমর
পর্যন্ত তার গাছের সাথে বাাঁধা। হয়তো ছেলেটা খুব
ঘাবড়িয়ে গেছে। ভয়ের কারণে সে মাঝে মাঝেই
জিভ দিয়ে শুকনো ঠোটেকে ভিজিয়ে নিচ্ছল।
লামা গুরু ছেরিংগ কিছুদুর থেকে চেঁচিয়ে
জিজ্ঞাসা করলেন-ঠুনঠুন! ত্রি জটার মালিশ দিয়েছ
একে? কড়াইটার পাশে একটি বেটে লামা
দাঁড়িয়েছিল। তার হাতের ত্রিশুলটা ঝকমক করছিল।
সে ছেলেটাকেই মনোযোগ দিয়ে দেখছিল।
হঠাৎ লামা গুরু ছেরিংগ এর কষ্ঠস্বর শুনে চমকে ঘুরে
তাকাল। ততক্ষণে লামা গুরু ছেরিংগ তার একদম
পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। উনি তার বক্তব্যের
পূনরাবৃত্তি করলেন। লামা ঠুঠুন যেন চমকে গেল। তার
চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গেল। হয়তো সে তার নিজের
দোষ বুঝতে পেরেছিল। তার মাথা নিচেু হয়ে গেল।
তিনি আরও বললেন- আমি সব দেখছিলাম। আমি যদি
সব দিকে নজর না রাখি তাহলে তোমরা যে কী করে
বসবে তা জানি না। ছেলেটা মরে যেত যে।
লামা ঠুনঠুন ভীতস্বরে অত্যন্ত বিনীত ভাবে বলল,
গুরুদেব, আমি ভুলে গেছিলাম।
তিনি বিরক্ত হয়ে বললেন, তুমি সরে যাও। শেষ পর্যন্ত
এ কাজ আমাকেই করতে হবে।
বেঁটে লামা মাথা নিচু করে একদিকে সরে গেল। হঠাৎ
লামা গুরু ছেরিংগ এর খেয়াল হল যে আমি এখানে
আছি। তিনি তিব্বতী ভাষায় সবাইকে সব কিছু বুঝিয়ে
বলে দিলেন। এতে সবাই নিশ্চিন্ত হয়ে গেল।
আমি আর একটু কাছে চলে গেলাম।
ছেরিংগ বললেন- চুপ চাপ সব দেখে যাও।
আমি নির্বাক, পাথরের মতো দৃষ্টি নিয়ে সব কিছু
দেখতে লাগলাম। এবার লামা গুরু ছেরিংগ কড়াইতে
রাখা হাল্কা ছাই রঙ্গের বস্তুটিকে হাতার সাহায্যে
ছেলেটির সারা দেহে ছিটিয়ে দিতে লাগলেন।
যেভাবে হোলির সময় বাচ্চারা নোংরা বস্তু দেহে
ছুড়ে মারে, ঐ ভাবেই বস্তুটি তার সারা শরীরে
পড়তে লাগলো। যেখানে পড়ছে সেখানেই তা আটকে
যেতে লাগল আঠার মতো। ছেলেটি সমানে চীৎকার
করে যেতে লাগল। তার শরীরের মাংস, চর্বি সব গলে
গলে নিচে পড়তে লাগল। কিছুক্ষণ বাদে ছেলেটা
মাখামাখি হয়ে গেছে। তার সাথে সাথে তার
দেহের সব মাংস ও চর্বি গলে গলে নিচে পড়তে
লাগল। তার মাংস, চর্বি ও রক্ত গলে গলে পড়ছিলো ও
পায়ের দিকে গড়িয়ে নিচে জমা হচ্ছিল। মানব
দেহের মাংসের খন্ড ও চর্বি এইরকম শ্মশানে চিতায়
জ্বলতে দেখেছি বা কোন পুড়ে যাওয়া মানুষের
শরীরে দেখেছি। কিন্তু এখানে তো সরা শরীর গলে
গলে পড়ছিল। ঠিক যেমন জ্বলন্ত মোমবাতীর মোম
গলে গলে পড়ে। তার শরীরের সব মাংস মোমের মত
গলে গলে নিচে পায়ের কাছে জমা হচ্ছিল। রক্তের
ধারা আমার কাছ পর্যন্ত এসে গেছিল।
হতবাক হয়ে আমি সব কিছু দেখছিলাম। বিষ্ময়ে চোখ
বিস্ফারিত হচ্ছিল। আমার লোমকুপ ভয়ে খাড়া হয়ে
যাচ্ছিল। দেখতে দেখতে ছেলেটির দেহ কঙ্কালে
পরিণত হল। হাড় দিয়ে তৈরী একটি কঙ্কাল। তার সেই
সুন্দর শরীর নিমেষেই শুধু হাড় বিশিষ্ট কঙ্কালে
পরিণত হল।
একবার লামা ছেরিংগ ঘুরে আমাকে দেখলেন। তার
আগুনের গোলার মতো চোখ দেখে আমি ভীত-সন্ত্রস্ত
হলাম এবং পিছে হটে গেলাম। পা বাঁধা কঙ্কালটা
খাড়া হয়ে দঁড়িয়েছিল। তাকে যা দিয়ে বাঁধা
হয়েছিল সেটাও গলে গেছিল। তার সমস্ত মাংস, চর্বি
গলে নিচে পড়েছিল। লাল, সাদা রঙ্গের টুকরোগুলো
টপটপ করে পড়ছিল।
হঠাৎ উপস্থিত সব লামা নিজেদের অঞ্জলি ভরে ভরে
ঐ রক্ত মাংস, চর্বি ইত্যাদি কড়াইতে ফেলতে
লাগলো। দেখতে দেখতে সবটাই কড়াইতে রাখা শেষ
হলো। মাংস ভাজার তীব্র কটু গন্ধে আমার মাথা
ঘুরতে লাগল। ঐ সব জিনিসগুলো খুব দ্রুত কড়াইতে
ফেলা হয়েছিল। লামারা কোন অশ্রুতপূর্ব শব্দ বলে
যাচ্ছিল। যখন সবটা কড়াইতে ফেলে নাড়া চাড়া
করা শেষ হল তখন আবার হাতার সাহায্যে কঙ্কালের
উপর ছিটাতে লাগল। এমন ভাবে ফেলতে লাগল যে,
যেখানেই পড়লো কঙ্কালের হাড়ের সাথে আঠার
মতো লেগে রইল। এই ভাবে ধীরে ধীরে পুরো
কঙ্কালটা ঢাকা পড়ে গেল। কিছু কিছু জায়গায় অবশ্য
ঘনত্ব কমবেশি হল।
বেঁটে লামা ঠুনঠুন তার হাতের সাহায্যে সেগুলো
সমান করে দিতে লাগল।
দেখতে দেখতে কঙ্কালটা একটা মুর্তিতে পরিণত হল।
তখন ঠুনঠুন তার কপালের ঠিক নিচে একটি চোখ
বানিয়ে দিল। তারপর তার উপর এক পরত রক্ত মাংস
মিশানো বস্তু দিয়ে তা ঢেকে দিল।
তার এ টুকু করার পরই লামা গুরু ছেরিংগ ওখানে রাখা
তামার একটা কলসি থেকে কিছুটা তরল বস্তু নিয়ে ওর
উপরে ছড়িয়ে দিলেন। ঐ দেহ খাঁচাটা যেন তাতে
স্নান করে ফেলল। এবার লামা ঠুনঠুন দেহটা মুছতে
লাগল। একটা বিচিত্র ধরনের কাপড় তার হাতে ছিল।
তাই দিয়েই সে মুছতে শুরু করল।
এরপর এক বিশেষ ধরনের মালিশ লাগিয়ে দিল।
যখন ঐ মালিশ লাগন শেষ হলো তখন লামা গুরু
ছেরিংগ ছেলেটির দেহে কিছু একটা ছিটিয়ে
দিলেন। একটা অদ্ভুত তেজাল গন্ধে আমার নাক ফেটে
যাচ্ছিল।
লামা গুরু ছেরিংগ অস্ফুট স্বরে কিছু একটা বললেন
এবং ছেলেটির মুর্তি হড়বড় করে যেন গভীর ঘুম থেকে
জেগে উঠে প্রানবন্ত হল।
আমি লামা গুরু ছেরিংগ এর সামনে মাথা নত করলাম।
অতিথিরুপে তিনি আমাকে গুম্ফায় রেখেছিলেন।
এবার আমি ফিরে চললাম। সকুশলে ফিরে এসে শুনলাম
যে তিব্বতের উপর চিনের পুরা অধিকার হয়ে গেছে।
আমার এ সফর দীর্ঘ ও কষ্টপ্রদ অবশ্যই ছিল তবুও আমি
ভাগ্যবান যে আমি আমার জীবন কালেই মরা মানুষের
পূনজর্ন্ম ( অবশ্যই তন্ত্র ও ঔষধের দ্বারা) ও তৃতীয়
নেত্র দেখতে পেয়েছি। জানি না লামা গুরু ছেরিংগ
এখন কোথায়? কিন্তু যখনই তার কথা মনে আসে আমি
তাঁকে প্রণাম করি এবং আমি বিশ্বাস করি যে আমার
প্রণাম তাঁর কাছে অবশ্যই পৌঁছেছে।।