পৃষ্ঠা গুলি দেখুন

জ্বীন ‌সাধনা . ‌‌মুসলিম ‌সাধনা



জ্বীন সাধনা এবং ধন সম্পদ লাভের উত্তম উপায়ঃ

আজ আমরা যে সাধনা বিষয় আলোচনা করতে যাচ্ছি, এশিয়া তথা সারা মুসলিম জাহানের মুসলমানদের একমাত্র আকাঙ্খার সাধনা জ্বীন সাধনা নিয়ে। আমরা এ বিষয় কিঞ্চিৎ আলোচনা করা ও এরপর সাধনার বিধি প্রদান করার ইচ্ছে পোষন করছি।
আমাদের সমাজে লোক মুখে ও বিভিন্ন ভন্ড প্রতারক তথাকথিত জ্বীন সাধকদের দ্বারা ছড়ানো গুজব গুলোর পর্দা উত্তোলন করবো। যেনে রাখুন আমাদের দেশের তথা এশিয়া মহাদেশের গ্রাম গঞ্জে বা শহরাঞ্চলে অনেক জ্বীন বাবা, জ্বীন হুজুরদের সাক্ষাৎ পাই যারা নাকি জ্বীন চালান দিয়ে নানা বিধ কর্ম করে থাকে, জ্বীন দ্বারা হারানো মানুষকে খুজে দেয়, হারানো বস্তুকে খুজে দেয়। প্রেমিক প্রেমীকার মিলন ঘটায়, একজন সাধক অন্য কোন ব্যক্তিকে জ্বীন উপঢৌকন হিসেবে বা অর্থের বিনীময় দিয়ে থাকে। অনেকে জ্বীন দ্বারা কবিরাজী করে থাকে কার কি রোগ কার কি সমস্যা রোগী দেখেই বলে দেয়। আসলে এ সকল কিছুই সম্পূর্ণ ফেইক, ভুয়া, ভন্ডামী। তাহলে প্রশ্ন জাগতে পারে জ্বীন দিয়ে আপনি কি করবেন, বা জ্বীন সাধক রা জ্বীন দিয়ে কি করে। প্রথমত আপনাদের এ বিষয় অজ্ঞতার কারনেই তথাকথিত জ্বীন হুজুর বাবারা আপনাদের স্বরলতার সুযোগ নিয়ে এমন প্রতারনা করছে। বস্তুত কোন জ্বীন সাধক যদি অন্য কোন ব্যক্তিকে এই বিষয়টি জানায় যে সে জ্বীন সাধক, বা তার সাহার্যাথ্যে কোন জ্বীন রয়েছে তবে সেই সময় হতেই সে এই শক্তি হতে হতাষ হবে অর্থাৎ তার জ্বীন তার সঙ্গ পরিত্যাগ করবে। আর কখনো সে জ্বীন দ্বারা নিজের বা অন্যের উপকার করতে পারবে না।
জ্বীন একটি শক্তি যা মানুষ তার পরিশ্রম তথা সাধনা দ্বারা তাকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করে এবং তাকে তার প্রয়োজনে ডাকার শক্তি অর্জন করে। এখানে আমাদের জানা উচিৎ সকল সময় সে আমাদের চাইতে অধিক ক্ষমতাবান, আর যে জিনিস কে দেখা যায় না সে এমনিতেই ক্ষমতাবান। আর নিজের চাইতে ক্ষমতাশালী কাউকে দিয়ে অন্যের কাজ করানো বা দাসবৎ ব্যবহার করার কথা বা ইচ্ছে দুটোই গন্ড মুর্খদের হতে পারে, জ্ঞানির হবে না। জ্বীন সাধনা দ্বারা আপনি নিজের স্বার্থ হাছিল করতে পারেন, নিজের উপকার করতে পারেন। নিজ আর্থিক অনটন, কোন ব্যক্তিকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করা, কোন গুপ্তধনের খোজ করা, আধ্যাত্বিক বিষয় জানা এক কথায় আপনার প্রয়োজনে তাকে নির্দিধায় কাজ করাতে পারেন। তবে কখনই আপনি তাকে অন্যের কাজ করাতে ব্যবহার করাতে পারবেন না। আর সাধারন একটি বিষয় বুঝতে পারে না অনেকেই সে যদি কাউকে অর্থ সম্পদ দেওয়ার ইচ্ছে করে তা অনায়েসেই দিতে পারে যা তার দ্বারা সম্ভব, কেন সে তা না করে তাকে দিয়ে কবিরাজি করাবে ভাবুন। আসলে এটি একটি পুরোদস্তুর ভন্ডামী। আবারো বলছি বিশ্বে জ্বীন সাধক রয়েছে অগনিত তবে তা আপনার জানা ব্যক্তিগুলো কখনই নয়, যারা সমাজে প্রতিষ্ঠিত, সফল তেনাদের মধ্যেই রয়েছে অনেকে যাদের দেখে হয়তো আপনি ভাবতেও পারবেন না তিনি জ্বীন সাধক। আমরা এ বিষয় আমাদের অন্য পোষ্টে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আজ এই সাধনা করার কয়েকটি প্রচলিত নিয়মের মধ্যে একটি সহজ নিয়ম আপনাদের সামনে উপস্থিত করছি। মনে রাখতে হবে, জ্বীন সাধনা অবশ্যই একটি কঠিন সাধনা, এর চাইতেও বড় বিষয় হচ্ছে সম্পূর্ণ বিধি বিধান মেনে তাকে সারা জীবন নিজের নিয়ন্ত্রনে রাখা, কারন এই উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্য শক্তি আপনার একটু আচার বিধি পালনে সমস্যা হলেই আপনাকে ছেড়ে চলে যেতে পারে বা আপনার সমুহ ক্ষতিও করতে পারে। জ্বীন সাধকের অনেক সাধক সুধু বিধি বিধান না মেনে সাধনা করতে গিয়েই মৃত্যু মুখে পতিত হয়েছে। আপনি যদি একজন সিদ্ধ পুরুষের স্বার্নিদ্ধে এই সাধনা করেন তবে অনায়েসেই সাধনায় সফল হয়ে সারাটি জীবন, ভৌতিক-পার্থিব সকল ইচ্ছের পূর্নতা ও সুখ বয়ে আনতে পারবেন।
জ্বীন সাধনার দোওয়াঃ  বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম। আ’যামতু আ’লাকুম ইয়া মা’শারাল্ জিন্নি ওয়াল ইনসি রবতান রবতান, মাহলান মাহলান, নাশরান নাশরান, মাহশারান মাহশারান, বিহাক্কি সুলাইমানা পয়গামবারাইনি দাউদা আ’লাইহমাস সালামা হাজির শাও, হাজির শাও, হাজির শাও।
নিয়মঃ জ্বীন হাজির করতে অবশ্যই চন্দ্রমাসের প্রথম শুভদিন দেখে শুরু করতে হবে, অবশ্যই যদি চন্দ্রমাসের শুরুর দিনটি বৃহষ্পতিবার হয় তবে সেটি সবচাইতে ভালো দিন। সাধনার জন্য একটি নির্জন পাক পবিত্র ঘর নির্বাচন করতে হবে। ঘরটি উত্তর মুখি বা পূর্বমুখি হলে ভালো, পর্যাপ্ত আলো বাতাস ঘরে আসা যাওয়া করতে পারে এমন হলেই শ্রেয়। ঘর সকল সময় সুগন্ধি যুক্ত রাখতে হবে। এমন স্থানে ঘর নিতে হবে যেনো সেখানে অন্যমানুষদের কোলহ আওয়াজ শব্দ মুক্ত থাকে। গুরুর নির্দেশনা অনুযায়ী একটি শুভ মুর্হুত দেখে উপরক্ত দোওয়াটি মুখস্ত করতে হবে সেই সাথে নিচের দেওয়া নকশাটি গোলাপ জ্বল, মেশক, কস্তুরী সহযোগে কোন নতুন সাদা কাপড়ের টুকরায় লিখিতে হইবে।অন্তত্য ১৪ টি নকশা কোন শুভ মুহুর্তে লিখে সঙ্গে রাখিবে। নিজের শরীরে সকল সময় সুগন্ধি ব্যবহার করিবে। সেলাই বিহীন নতুন সাদা বা এক রঙ্গা পশমী কাপড় পোষাক হিসেবে ব্যবহার করিবে, মাথায় পাগড়ী বা বড় টুপি ব্যবহার করিবে, নিজ আসন অবশ্যই পশ্চিম মুখি করবে। একটি পাট বা পশমী বা চামরার তৈরী আসন ব্যবহার করবে, দোওয়া জপ করার জন্য মুক্তার তৈরী তসবি বা কাঠের তসবী ব্যবহার করিবে। এবার চন্দ্রমাসের প্রথম বৃহষ্পতিবার অর্ধরাত্রিতে নিজ আসনে পশ্চিমমুখে বসে, সামনে তিনটি মোমবাতি জ্বালাইবে কোন সুগন্ধি তৈল, প্রদিপ ও দিয়াশালাই সঙ্গে রাখিবে। গুরু প্রদত্ত নির্ধারিত দরুদ ১১ বার পাঠ করে উপরক্ত দোওয়াটি এগারশত বার পাঠ করিবে এবং পরবর্তীতে পূনরায় দরুদ ১১ বার পাঠ করিবে। এবার সেই স্থানে বসেই উপরক্ত নকশাটির একটি সলিতা বানাইয়া সেই মাটির প্রদিপে তৈল দিয়ে জ্বালাইয়া দিবে। প্রদিপ জ্বলিতে থাকিবে, সেই স্থানের পার্শ্বেই মাটিতে বিছানা করিয়া কাহারো সাথে কথা না বলিয়া দরুদ পড়িতে পড়িতে শুইয়া পড়িবে। এভাবে একাধারে এই সাধনা চলিতে থাকিবে। ‍যেদিন তুমি নিজের শরীরে ভার অনুভব করিবে, বা হটাৎ মোমবাতি নিভিয়া যাইবে বা সামনে কেউ উপস্থিত হইবে। তাহাকে দেখিয়া ভিত না হইয়া তাকে স্ব-সন্মানে সালাম প্রদান করিবে, তার নাম জিজ্ঞাসা করিবে। তাকে তোমার সাথে থাকিয়া তোমার প্রতিটি কাজে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ জানাইবে। তাকে পরবর্তীতে ডাকিবার জন্য বিধি জানিয়া লইবে। এবং তার দিকে কিছু কস্তুরী আতর বা গোলাপ জ্বল ছিটাইয়া তাকে বিদায় জানাইবে। এরপর হইতে নিজের প্রয়োজনে তাকে স্বরন করা মাত্র তার ‍উপস্থিতী অনুভব করিবে  জ্বীন সাধনার নকসা টি এই ..যে কোন সমসায় কল করুন 01978142 102

এ্যাটক ‌‌স‌াধনা


.‌ত্রাটক সাধনাঃ
জীবনের চলার পথে আমাদের সকলেরই রয়েছে
হাজারো স্বপ্নপূরনের লক্ষ্য, কিছু আশা, কিছু চাওয়া
ইত্যাদি কারন মানুষের জীবনের শুরুই হয় বিভিন্ন
চাহীদা দিয়ে। আমরা কেউ’ই সকল চাহীদা পূরনে
সমর্থ নই। আমাদের চাওয়ারও কোন শেষ নেই।। তবে
সমাজে কিছু কিছু মানুষ আছে যাদের আকাঙ্খার
চাইতে পাওয়াটা অনেক বেশি আবার কেউ কেউ না
চাইতেই অনেক কিছু পেয়ে যায় আবার কারও হয়তো
অধিকাংশ চাওয়াই পূর্ন হয়ে যায়, কিন্তু এমন মানুষের
সংখ্যা খুবই নগন্য। আমরা অনেকেই হয়তো বিশ্বাষ
করবো না যে এই বিংশ শতাব্দিতেও আমাদের
চারপাসে প্রতি ১০ জন সফল মানুষের বিষয়ে যদি
ভালো ভাবে খোজ খবর নেওয়া হয় তবে আমরা
জানতে পারবো তাদের ৭-৮ জনই কোন না কোন পীরের
মুরীদ, কোন তান্ত্রিক গুরুর শিশ্য, কোন সুফির খাদেম,
কোন দেবতার সাধক বা কোন শক্তির আর্শিবাদ
প্রাপ্ত। যা সাধারনত অত্যন্ত গোপন বিষয়।
আমরা আজ যে বিষয়ের উপর আলকপাত করবো তা
হলো “ত্রাটক” !!! আসলে এই “ত্রাটক” বিষয়টি কি,
আমরা এখানে ত্রাটক বলতে এমন এক সাধনাকে
বোঝাচ্ছি যা মানুষের তৃত্বিয় নেত্রের সাথে জরিত,
যা মানুষের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের সাথে সংপৃক্ত। আধুনা
বিজ্ঞানের যুগে আমরা সকলেই হয়তো মেডিটেশন,
যোগ ব্যয়াম ইত্যাদি সর্ম্পকে বেশ ভালোই জানি, এই
“ত্রাটক” হচ্ছে এই গুলোরেই গুরু সমতূল্য। কারন এই একটি
মাত্র সাধনা দ্বারা ব্যক্তি তার অসম্পূর্ণ
স্বপ্নগুলোকে বাস্তবে রুপদিতে পারে। একটি বিষয়
মনে রাখতে হবে, কেউ বড় হয়ে জন্মায় না, প্রতিটি
মানুষ তার কর্ম সেই সাথে কর্মের সূযোগ্য সুবিধা
সমৃদ্ধ সুযোগের মাধ্যমেই উপরে উঠে বড় হয়.  ‌আর ‌ ‌এই এাটক ই হলো এক মর্ত পথ 
ষা মাধমে আপনার জীবনের সকল চওয়া  পাওয়া  পুরন করতে পারেন 
আপনি কি‌ ‌চান বা চান ‌‌না সবই করতে ‌পারবেন ..আপনি চাইলে কারো ভালো হবে . বা কারো ক্ষতি সাধন দুই 
করতে পারবেন . এই‌ এাটকের জে কি ক্ষমতা তা বলে সেস করা সম্ভব না পরে আরেক টি পোষ্টে আলোচনা
করব ‌. তান্তিক গুরু আজিজ রহমান ‌‌‌.‌ যে কোন সমদ্যা কল করুন. ‌‌যে কোন দেশ বা জেলা থেকে .ইমু 0157786808/

ব্ল্যাক ‌ম্যাজিক ‌র‌হস্য



ব্ল্যাক ম্যাজিক রহস্য
সভ্যতার আদি থেকেই জাদুবিদ্যা আর জাদুকর বিষয়ে মানুষের প্রচণ্ড রকম আগ্রহ। জাদুবিদ্যা মূলত অতীন্দ্রিয় আর প্রাকৃতিক শক্তিকে বশ করার বিদ্যা! ইংরেজি ‘ম্যাজিক’ শব্দের উদ্ভব হয়েছে ফারসি শব্দ মাজি থেকে! মাজিরা যে সব ক্রিয়া-কর্ম পালন করত, গ্রিকরা সেসবকে ম্যাজিক বলে অভিহিত করতেন! আর ম্যাজিকের সঙ্গে আত্মা বা ভূতের বিষয়টি চলে আসে অনিবার্যভাবে। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী ভূত হলো এমন এক জিনিস, যা মৃত ব্যক্তির আত্মা। আর তা জীবিত ব্যক্তির সামনে দৃশ্য আকার ধারণ বা অন্য কোনো উপায়ে আত্মপ্রকাশ করতে সক্ষম। ভৌতিক অভিজ্ঞতায় ভূতকে নানাভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। কখনো অদৃশ্য বা অস্বচ্ছ বায়বীয় আবার কখনোবা বাস্তবসম্মত সপ্রাণ মানুষ বা জীবের আকারে। আর এসব ভূত বা প্রেতাত্মার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে ভবিষ্যদ্বাণী বা কোনো কাজ করার বিদ্যাকে ব্ল্যাক ম্যাজিক, নেক্রোম্যান্সি বা কালো জাদু বলে। অন্যদিকে এক ধরনের বিশেষ ব্ল্যাক ম্যাজিক হচ্ছে ভুডু। ভুডুবিদ্যার সাহায্যে নাকি কবরের লাশ জ্যান্ত করে তাকে গোলামের মতো খাটানো যায়। অন্যদিকে শামানের কাজও মৃত মানুষের আত্মা নিয়ে। তবে ভুডুর সঙ্গে শামানদের পার্থক্য— এরা মন্দ আত্মার বিরুদ্ধে লড়াই করে। মন্দ আত্মাকে কাজে লাগায়। বিদেশি সিনেমায় এমনকি ভারতীয় সিরিয়ালে প্রায়ই দেখা যায়, একজন দুষ্ট ব্যক্তি একটি পুতুলের গায়ে সুচ ফুটিয়ে আরেক জায়গায় এক ব্যক্তিকে হত্যা করছে কিংবা অন্য কোনো উপায়ে ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। বাংলায় একে ফুঁক দেওয়া, কবজ করা অথবা বাণ মারা বলে। এ ধরনের ঘটনা যারা ঘটায় তাদের ওঝা বলে। আর এ প্রক্রিয়াটিই বিশ্বব্যাপী ব্ল্যাক ম্যাজিক বা কালো জাদু নামে পরিচিত। খ্রিস্টধর্ম প্রবর্তনেরও আগের কথা। বহুকাল আগে পাশ্চাত্যে বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে নির্দিষ্ট কোনো ধর্মের প্রচলন ছিল না। তবে তাদের মধ্যে অদ্ভুত কিছু বিশ্বাস ও কর্মকাণ্ডের চর্চা ছিল। এরা এক একটি গোত্র বিভিন্ন কাল্পনিক ভূত-প্রেত বা অশুভ আত্মার আরাধনা করত। যা আফ্রিকান ব্ল্যাক ম্যাজিক বা কালো জাদু নামে পরিচিত। এমনকি এখনো এ বিদ্যার গোপন অনুসারীরা তাদের এ বিদ্যা দিয়ে মানুষের ক্ষতি করে আসছে। এ বিদ্যায় পারদর্শীদের ডাকি বা ওঝা বলে আর আফ্রিকান ভাষায় এদের বলে কিনডকি।
👺আত্মাসংক্রান্ত ধারণা থেকেই উদ্ভব
পৃথিবীতে ধর্মের আবির্ভাবের আগেও মানুষের মধ্যে আধ্যাত্মিক চর্চা ছিল। আবার ধর্মের আবির্ভাবের পরও এই চর্চা অব্যাহত ছিল। বহুকাল আগে পাশ্চাত্যের ধর্মহীন গোত্রের মধ্যে অদ্ভুত কিছু বিশ্বাস ও কর্মকাণ্ডের চর্চা ছিল। এরা এক একটি গোত্র বিভিন্ন কাল্পনিক ভূত-প্রেত বা অশুভ আত্মার আরাধনা করত। আর নিজেদের প্রয়োজনে এই আত্মাকে ব্যবহার করত। এই বিশ্বাসের চর্চা মূলত ছিল আফ্রিকানদের মধ্যে। আর তাই বিশ্বজুড়ে এটি আফ্রিকান ব্ল্যাক ম্যাজিক বা কালো জাদু নামে পরিচিত। এমনকি এখনো এ বিদ্যার গোপন অনুসারীরা তাদের এই চর্চা চালিয়ে যাচ্ছে।
মূলত প্রাক-শিক্ষিত সংস্কৃতির সর্বপ্রাণবাদ ও পূর্বপুরুষ পূজার মধ্যে ভূত বা আত্মাসংক্রান্ত ধ্যান-ধারণার প্রথম বিবরণ পাওয়া যায়। সে যুগে কিছু নির্দিষ্ট ধর্মীয় প্রথা, অন্ত্যেষ্টি সংস্কার, ভূত তাড়ানো অনুষ্ঠান ও জাদু অনুষ্ঠান আয়োজিত হতো। আর এসব আয়োজনের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল মৃত আত্মার সন্তুষ্টি আনয়ন। মূলত আত্মাসংক্রান্ত সেই ধ্যান-ধারণা থেকেই ব্ল্যাক ম্যাজিক বা কালো জাদুর বিবর্তন।

👹রোজাদের দাপুটে প্রথা
আদিম সমাজে ওইভাবে ধর্মের চর্চা না থাকলেও যেসব লোক আধ্যাত্মিক চর্চা করতেন, তাদের আলাদা দাপট ছিল। সাধারণ মানুষ এদের প্রচণ্ড রকম ভয়ের চোখে দেখতেন। আদিম সমাজের এমনই এক ধরনের মানুষ ছিল যাদের উইচ-ডক্টর বা রোজা নামে ডাকা হতো। এরা এমন ব্যক্তি ছিলেন যারা ব্ল্যাক ম্যাজিক জানতেন। অতীন্দ্রিয় শক্তির বলে প্রেতাত্মাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন। আর প্রেতাত্মাদের দিয়ে সম্ভব-অসম্ভব যে কোনো কাজ করে ফেলতে পারতেন খুব সহজেই। সে কারণে ওই সময় রোজারা একাধারে চিকিৎসক, জাদুকর এবং পুরোহিতের ভূমিকা পালন করতেন। বর্তমানকালেও আদিম-সামাজিক ব্যবস্থায় বসবাসকারীদের মধ্যে উইচ-ডক্টর বা রোজাদের প্রভাব দেখা যায়। আদিম জাতিদের মধ্যে রোজাদের খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হতো।
রোজারা তাদের ডাকিনীবিদ্যা খাটিয়ে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিতে পারত। চোর বা হত্যাকারী ধরা ও শাস্তি প্রদানে রোজাদের অপরিহার্য ভূমিকা ছিল। এ ছাড়াও তারা জাদুবিদ্যার সাহায্যে রোগ নির্ণয় এবং এর প্রতিকার করতেন। তারা তাদের শিশুদের রোগাক্রান্ত করতে পারতেন এবং মানুষের মৃত্যুও ঘটাতে পারতেন। মানুষের মৃত্যু ঘটানোর জন্য তারা নানা ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করতেন। কখনো মানুষের একটি ছোট আকৃতির পুতুল তৈরি করে তাতে পিন বিদ্ধ করতেন। আবার কখনো কোনো লোকের চুল বা নখের টুকরো সংগ্রহ করে তা মাটিতে পুঁতে রাখতেন। এগুলো যখন আস্তে আস্তে শুকিয়ে যেত মানুষটিও ক্রমেই মৃত্যুমুখে পতিত হতো। রোজারা প্রায়ই রোগের চিকিৎসার জন্য গাছ-গাছড়া, লতাপাতা ব্যবহার এবং রোগের সংক্রমণ দূর করার জন্য জল ব্যবহার করত। কখনো তারা জাদুকরী পাথরসহ জল ছিটিয়ে দিত।
তারা জাদুকরী গান, প্রার্থনা এবং আশ্চর্য ভঙ্গিমায় নৃত্য করত। এর উদ্দেশ্য ছিল সাধারণ মানুষের মনকে প্রভাবিত করা। রোজারা সব সময় রঙিন পোশাক পরত, মুখোশ ধারণ এবং মুখমণ্ডল চিত্রিত করত। কেউ কেউ পশুর চামড়াও পরিধান করত। বস্তুত মানুষকে সম্মোহিত করত। আর লোকজন বিশ্বাস করতে বাধ্য হতো যে তাদের সৌভাগ্যের জন্য রোজারাই দায়ী।
👺 ভুডু বনাম শামান
ভুডু (Voodoo) হচ্ছে এক ধরনের ব্ল্যাক ম্যাজিক বা ডাকিনীবিদ্যা। শোনা যায়, ভুডুবিদ্যার সাহায্যে নাকি কবরের লাশ জ্যান্ত করে তাকে গোলামের মতো খাটানো যায়। শামানের কাজও মৃত মানুষের আত্মা নিয়ে। তবে ভুডুর সঙ্গে শামানদের পার্থক্য হলো— এরা মন্দ আত্মার বিরুদ্ধে লড়াই করে। মন্দ আত্মাকে কাজে লাগায়। ভুডু এক ধরনের অপবিদ্যা। যারা ভুডুবিদ্যা জানে, তারা নাকি ইচ্ছা করলেই যাকে খুশি তার ক্ষতি করতে পারে। তাই এ বিদ্যায় পারদর্শীদের অনেকেই এড়িয়ে চলেন।
তবে শামান সব সময় ন্যায়ের পক্ষে কাজ করে। শামানকে কেউ বলে জাদুকর, কেউ কবিরাজ। শামান কথাটি এসেছে সাইবেরিয়ার তুঙ্গুস ভাষী মেষ পালকদের কাছ থেকে। অষ্টাদশ শতাব্দীর ভ্রমণকারীরা প্রথম শামানদের ব্যাপারে বিশ্ববাসীকে অবহিত করে। জানা যায়, শামানরা এমন ধরনের মানুষ যাদের রয়েছে অবিশ্বাস্য শক্তি। মৃত ব্যক্তির আত্মার কাছ থেকে জ্ঞান সংগ্রহ করে তারা। ইচ্ছা করলেই নাকি নশ্বর দেহ ত্যাগ করে স্বর্গ বা নরকে স্বচ্ছন্দে প্রবেশ করতে পারে। শামানদের প্রধান বাসস্থান এক সময় সাইবেরিয়া হলেও সোভিয়েতদের অত্যাচারে তারা দেশ ত্যাগে বাধ্য হয়। তারা ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের নানা জায়গায়। শামান বর্তমানে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে উত্তর আমেরিকা এবং পশ্চিম ইউরোপের শহরাঞ্চলেও। শামানরা তাদের নানা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড প্রদর্শনের জন্য ভ্রমণ করছে চিলির সান্তিয়াগো থেকে শুরু করে কোরিয়ার সিউল পর্যন্ত। যদিও অনেক দেশের সরকার শামানিক চর্চাকে অবৈধ এবং বিপজ্জনক বলে বর্ণনা করেছে। কিন্তু রোমান্টিক মানুষের কাছে শামান হলো ধর্মীয় অভিজ্ঞতা লাভের গাইড। আর জাতীয়তাবাদীরা শামানকে মনে করে প্রাচীন সাংস্কৃতিক জ্ঞানের বাহক।
👺শামানদের ইতিবৃত্ত
শামানদের মতে, আমাদের চারপাশে যত উপাদান রয়েছে সব কিছুর মাঝে আছে আত্মার অস্তিত্ব। ‘ভুডু’ কথার অর্থও ‘আত্মা’। এই শব্দটির উৎপত্তি ফন জাতির কাছ থেকে। এরা ইউয়ি সম্প্রদায়ের আত্মীয়। ভুডু চর্চার উৎপত্তি হাইতিতে। তবে আফ্রিকায় এর চর্চা ব্যাপক। ব্রাজিল, জ্যামাইকাতেও কিন্তু কম ভুডু চর্চা হয় না। তবে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নাম। যেমন, হাইতিতে বলা হয় ভুডু, ব্রাজিলে ক্যানডোমবল, জ্যামাইকাতে ওবিয়াহ ইত্যাদি। পশ্চিম আফ্রিকার মানুষ সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করে ভুডুতে সেখানকার কমপক্ষে ২৫ লাখ মানুষ এ বিদ্যার অনুরাগী। এ চর্চা সবচেয়ে বেশি হয় আফ্রিকার ঘানায়। ঘানার ককুজানের অধিবাসীরা এ বিদ্যাটির সাংঘাতিক অনুরাগী। এরা অসুখ-বিসুখে সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারদের কাছে যাওয়ার চেয়ে ভুডু চিকিৎসকদের ওপর অনেক বেশি ভরসা করে।
শামানরাও তাই। আত্মার ওপর এদের বিশ্বাস গভীর। এদের ধারণা, আত্মা তাদের সব বিপদ থেকে রক্ষা করবে। বংশপরম্পরায় এ বিশ্বাস চলে আসছে তাদের মাঝে। আফ্রিকায় যারা ভুডু চর্চা করে তারাও কিন্তু বংশানুক্রমে এ কাজ করে আসছে। আফ্রিকান বাবা-মা তাদের সন্তানদের এ বিদ্যা চর্চায় উৎসাহ জোগায়। প্রতিদিনই সকালে পূজারিরা স্থানীয় দেবতাদের উদ্দেশে নৈর্বেদ্য অর্পণ করে তারপর নিজের কাজে বের হয়। শামানরা শুধু বিশ্বাস করে আত্মায়। তাদের কোনো দেবতা নেই। তবে ভুডু শুধু বিশ্বাস করে আত্মায়। তাদের কোনো দেবতা নেই। তবে ভুডু অনুসারীদের বিভিন্ন দেবতা আছে। যেমন ফ্লিমানি কোকু হলো রোগ মুক্তির দেবতা, হেভিও সো হলো, বিদ্যুৎ এবং ব্রজের দেবতা, মেমি ওয়াটা ধন-সম্পদের দেবী ইত্যাদি। দেবতার ওপর তাদের এত বিশ্বাস যে, তারা মনে করে আগুন তাদের ক্ষতি করতে পারে না। ছুরি দিয়ে পেট কাটলেও তারা ব্যথা পায় না। তারা বলে, দেবতারা তাদের সব বিপদ থেকে রক্ষা করে।
শামানরাও বলে আত্মা তাদের সব রোগ মুক্তির পথ বাতলে দেয়। যারা এ সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী, তারা বলে শামানদের রয়েছে অলৌকিক ক্ষমতা। এরা আত্মার শক্তিতে বলীয়ান হয়ে স্বাস্থ্য, খাদ্য, উর্বরতা বিষয়ক সব সমস্যারও সমাধান করে দিতে পারে। শামানদের ব্যাপ্তি সাইবেরিয়া থেকে ল্যাপল্যান্ড, বিব্বত, মঙ্গোলিয়া, উত্তর এবং দক্ষিণ আমেরিকা (বিশেষ করে আমাজন এলাকায়) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, এমনকি ভারতেও বিস্তৃত। পূর্ব ভারতে সোরা নামে এক উপজাতি আছে, জঙ্গলে বাস করে। এরাও শামান সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী। সোরা উপজাতির লোকেরা মৃতের সঙ্গে কথা বলে। এখানে শামানের ভূমিকা সাধারণত পালন করে মহিলারা। তারা দুই ভুবন অর্থাৎ পৃথিবী ও স্বর্গের মাঝে সমন্বয় সাধন করে বলে শামান অনুসারীদের বিশ্বাস। মহিলা শামানকে কবর দেওয়া হয়। এরপর তার আত্মা চলে যায় অন্য ভুবনে। সেখানে মৃত ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে সে। লোকে মহিলাকে কথা বলতে দেখে। সোরাদের মতে, মৃত্যু মানে কারও অস্তিত্বের ধ্বংস নয়। মৃত্যু তাদের কাছে নতুন আরেক জীবন মাত্র। মৃত্যুর পরেও আত্মা যথেষ্ট শক্তিশালী থাকে, তাদের আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলে— এমনটিই বিশ্বাস সোরা উপজাতির।
👺শয়তানের প্রতীক
ব্ল্যাক ম্যাজিকের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো প্রতীক ও সংকেতচিহ্নের ব্যবহার। অনিষ্টকারী শয়তানের প্রতীককে ব্ল্যাক ম্যাজিশিয়ানরা কাজে লাগিয়ে এসেছেন যুগ যুগ ধরে। শয়তানের প্রতীক হিসেবে বিভিন্ন সভ্যতার মানুষের বিশ্বাস ছিল সেটি হচ্ছে— শিং। ব্ল্যাক ম্যাজিক চর্চায় শিং তাই অপরিহার্য। এক সময়ের বিখ্যাত জাদুকর ছিলেন জোহান রোসা। তার একটা মন্ত্রপুত আংটি ছিল। যেটায় একটা প্রেতাত্মাকে তিনি আটকে রেখে ছিলেন আর এটাকে দিয়ে সব কাজ করাতেন। তার মৃত্যুর পরে প্রকাশ্য জনসভায় আংটিটা হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ভেঙে ফেলা হয়েছিল। গর্ভবতী নারীদের প্রসব বন্ধ করা থেকে শুরু করে যৌনাকাঙ্ক্ষা চিরতার্থ করার মতো বীভৎস সব জাদু বিধানের চর্চা হতো তখন। এ সময়ে বিশ্বাস করা হতো বশীকরণের মাধ্যমে মানুষকে দাস বানিয়ে রাখা যায়। যে কোনো বিপজ্জনক কাজে যাওয়ার আগে ‘প্রয়োজনীয় মন্ত্রপুত জামা’ পরে যাওয়ার রীতি ছিল, কুমারী মেয়ের বড় দিনের এক সপ্তাহ ধরে এই ধরনের জামা ঘরে বুনত। ‘বান’ ছেঁড়ার কথা বাংলাদেশে অপরিচিত নয়, মধ্যযুগের এই (Magical Arrow) ধারণাটার ব্যাপক প্রচার ছিল। বিশ্বাস করা হতো এভাবে মানুষের ক্ষতি করা সম্ভব! মধ্যযুগে রেনেসাঁর আলো যতই ছড়াক না কেন, ব্ল্যাক ম্যাজিশিয়ানদের হাত থেকে কেউই রক্ষা পায়নি।
👺জাদুবিদ্যার নানান প্রকার
জাদুবিদ্যার প্রচলন সব সময়ই কৌতূহলজনক। সেজন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সমাজবিদ- নৃতাত্ত্বিকরা সমাজে প্রচলিত জাদু বিধানগুলো পর্যালোচনা করে এর শ্রেণি বিভাগ করার চেষ্টা করেছেন। যেমন স্যার জেমস জর্জ ফ্রেজারের মতে জাদুবিদ্যার বিধানগুলো প্রধানত দুই রকমের হোমিওপ্যাথিক এবং কনটেজিয়াস ম্যাজিক।
হোমিওপ্যাথিক ম্যাজিক সব সময়ই শত্রু ধ্বংসের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। এক্ষেত্রে শত্রুর প্রতিমূর্তি [মোম, মাটি, কাঠ, কাপড়] বা ছবি ইত্যাদি তৈরি করে পুড়িয়ে বা ছুরি দিয়ে কেটে ধ্বংস করা হয়। ধারণা এই যে, মূর্তিটা যে যন্ত্রণা পাচ্ছে, শত্রুও তেমন যন্ত্রণা বা আঘাত পাচ্ছে। এটাকে ব্ল্যাক ম্যাজিক বলে। তবে এই জাদু আবার অনেক সময় মানুষের উপকার বা ভালোর জন্যও ব্যবহার করা হয়। যেমন ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে এমন একটা জাদু বিধান আছে, কোনো নারীর সন্তান হচ্ছে না, তখন একটা কাঠের ছোট শিশু বানিয়ে নিঃসন্তান রমণীটির কোলে বসিয়ে আদর করে। এর ফলে তার সন্তান হবে এমন ভাবা হয়। কখনো কখনো রোগের চিকিৎসার জন্যও এই ধরনের জাদুর প্রয়োগ দেখা যায়। অন্যদিকে কনটেজিয়াস ম্যাজিক হচ্ছে মানুষের শরীরের বিভিন্ন অংশ বিশেষ যেমন চুল, নখ, থুথু বা পরিধেয় বস্ত্রের মাধ্যমে জাদু করে মানুষের ক্ষতি বা উপকার করা। এক্ষেত্রে শত্রুর আঙ্গুলের নখ, চুল, ভ্রু, থুথু -এসব সংগ্রহ করে মোমের সাহায্যে শত্রুর একটা অবিকল প্রতিরূপ তৈরি করা হয়। প্রতিমূর্তিটি ছয় দিন ধরে মোমের তাপে ঝলসাতে হবে এবং সাত দিনের দিন মূর্তিটি পুড়িয়ে ফেললে শত্রুর মৃত্যু হবে! জাদুবিদ্যার ধরন আর প্রকারভেদ নিয়ে অনেকে অনেক মত দিয়েছেন, তাদের সব মতবাদ একসঙ্গে করলে বলা যায় জাদুবিদ্যা প্রধানত তিন ধরনের। প্রথমত, সৃজনধর্মী জাদু বা হোয়াইট ম্যাজিক। ফসলের ভালো উৎপাদন, বৃষ্টি নামানো, গাছে ভালো ফল হওয়া প্রেম বা বিয়ে ইত্যাদির উদ্দেশ্যে এ জাদু ব্যবহৃত হয়। দ্বিতীয়ত প্রতিরোধক জাদু। এই জাদুকেও হোয়াইট ম্যাজিকের মধ্যেই ফেলা যায়। এটা বিপদ-আপদ এড়ানো, রোগব্যাধি দূর করা আর কালো জাদুর প্রভাব এড়ানোর কাজে ব্যবহার করা হয়। আর সর্বশেষ প্রকারটিই হচ্ছে ব্ল্যাক ম্যাজিক বা ধ্বংসাত্মক ম্যাজিক। এটি রোগব্যাধি সৃষ্টি, সম্পত্তি ধ্বংস, জীবন নাশের কাজে ব্যবহার করা হয়। ডাইনিবিদ্যায় এর প্রয়োগ বেশি দেখা যায়। সেই প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে আজ পর্যন্ত এর প্রভাব দেখা যায় রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির ওপর। জাদুবিদ্যার প্রাচীন ইতিহাস যদি আমরা খুঁজে দেখতে চাই তাহলে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে সেই প্যালিওলিথিক যুগের গুহামানবদের গুহাচিত্রের দিকে। অরিগেনেসিয়া নামক গুহায় বেশ কিছু মুখোশ পরা মানুষ আর জন্তু জানোয়ারের ছবি দেখা যায়, যেখানে মানুষগুলোর হাতের আঙ্গুলের প্রথম গিঁট পর্যন্ত কাটা! যদিও নৃতাত্ত্বিকেরা এদের কুষ্ঠরোগাক্রান্ত মানুষ বলে বর্ণনা করেছেন। তবে জাদুবিদ্যা বিশারদদের মতে মৃত্যুকে জয় করার জন্যই হাতের আঙ্গুল কেটে তা নিবেদন করার রীতি সে আমলে প্রচলিত ছিল। দেহের অংশ বিশেষ দিয়ে গুণ [ব্ল্যাক ম্যাজিক] করার রীতি এদেশেও দেখা যায়। প্রাচীন ধর্মগ্রন্থগুলোতেও নানা আঙ্গিকের জাদুবিদ্যা চর্চার প্রমাণ পাওয়া যায়। সমসাময়িক ধর্মগুরু আর জনগণের মধ্যে। জাদুবিদ্যার এই চর্চা কখনই থেমে থাকেনি। গোপনে একদল ব্ল্যাক ম্যাজিকের চর্চা করে যাচ্ছে।
👺নানান দেশে প্রাচীনকাল থেকেই...
ব্ল্যাক ম্যাজিকের চর্চা হয়ে আসছে বহুকাল আগে থেকেই। কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বা সভ্যতার লোক নয় ইতিহাস বলে বিভিন্ন সভ্যতায় বিভিন্ন গোষ্ঠীর মানুষের একটি অংশ কালো জাদুর চর্চা করে আসছে। কালো জাদু তাই কোনো দেশ কাল পাত্রে সীমাবদ্ধ নয়। ইহুদিরা মিসরে বন্দী অবস্থায় অবস্থানের সময়েই মিসরীয় জাদুবিদ্যার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। অবশ্য তাদের নিজেদেরও আলাদা বৈশিষ্ট্যময় জাদু বিশ্বাস ছিল। ইহুদি জাদুকরেরা বাষ্পস্নানের মাধ্যমে বলি আর উপহার দিয়ে অতিপ্রাকৃত শক্তিকে বশ করার চেষ্টা করত। এদের জাদু চর্চায় স্থূল যৌনাচার হতো। এ ছাড়া অল্পবয়স্ক বালকদের ব্যবহার করত অতীন্দ্রিয় শক্তির সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে। কালো জাদুর ইতিহাস বলে, ব্ল্যাক ম্যাজিকে বিশেষ দক্ষ ব্যক্তিদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন কিং সলোমন। তার ‘দ্য কি অব সলোমানদ’ বইটি পরবর্তীকালে জাদুবিদ্যার সর্বশ্রেষ্ঠ বই হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে।
ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন ধর্মগ্রন্থগুলোতেও জাদুবিদ্যা আর ধর্মের একটা জটিল সংমিশ্রণ দেখা যায়। এখনকার সমাজেও এমন অনেক বৈদিক জাদুবিদ্যাগত প্রক্রিয়া এখনো চালু আছে। হরপ্পা মহেঞ্জোদারতে উত্খননে প্রাপ্ত রিং স্টোনগুলো জাদুবিদ্যায় ব্যবহার করা হতো বলে জন মার্শাল ধারণা করেন। এ ছাড়া জাপানের প্রাচীন শিন্টো ধর্মের মধ্যে জাদুবিদ্যা চর্চার কথা জানা যায়। জাপানিরা বিশ্বাস করে, চালের মধ্যে ব্ল্যাক ম্যাজিক প্রতিহত করার বিশেষ শক্তি আছে। এ ছাড়া রাস্তার সঙ্গমস্থলও তাদের কাছে বিশেষভাবে পবিত্র। এসব স্থানে তারা এখনো জননেন্দ্রিয়র প্রতীক চিহ্ন স্থাপন করে, বিশ্বাস করে এই প্রতীক অশুভ শক্তিকে দূরে সরিয়ে রাখবে! জাপানিদের মতো চীনাদেরও ভূতপ্রেত সম্পর্কে বেশ ভালোই ভয়ভীতি ছিল। মজার ব্যাপার হলো, চীনের ঘরবাড়ি ও পুল নির্মাণে একটা বিশেষ দেবতা চীনাদের প্রভাবিত করেছে। এই দেবতার নাম হলো শা। শা হলো একটা অপদেবতা। আর চীনারা বিশ্বাস করে এই অপদেবতা সব সময়ে সোজা রেখা বরাবর চলে। তাই এটাকে প্রতিহত ছাদে আঁকা হতো বক্রতা আর কোণ! গ্রিকদের জাদুবিদ্যার জন্য বিশেষ বর্ণমালার সৃষ্টি করেছিল। এগুলো লেখা হতো পবিত্র কালি দিয়ে। আর লেখার সময় বার বার পাঠ করা হতো।
👺ছোট্ট শিশুর দেহে ৫০ সুই
প্রাচীনকালে কালো জাদুর বহু ব্যবহারের কথা শোনা গেলেও এখন ততটা বড় আকারে জাদুচর্চা করার কথা শোনা যায় না। তবে একেবারেই থেমে নেই কালো জাদু। সাম্প্রতিককালেরএমন দুটি ঘটনা মিডিয়ায় আলোড়ন তুলেছে। ব্ল্যাক ম্যাজিকের শিকার হয়ে সরাসরি হাসপাতালে ভর্তি হয় মাত্র দুই বছর বয়সী এক শিশু। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাকে দ্রুত চিকিৎসা দিতে গিয়ে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলেন চিকিৎসক। কারণ এ-ক্সরে রিপোর্টে শিশুটির শরীরের ভিতরের বিভিন্ন অংশে পাওয়া গেল ৫০টির মতো সুই। সুইগুলো দেখেই ব্ল্যাক ম্যাজিকের কথা মনে পড়ে গেল। ৫০টি সুইয়ের মাঝে ১৭টি ছিল বাচ্চা ছেলেটির পরিপাকতন্ত্রের ভিতরে। এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ঘটনার তদন্তের জন্য পুলিশ ডাকা হলো। পুলিশও প্রাথমিক মন্তব্য করল, কেউ একজন ব্ল্যাক ম্যাজিক বা কালো জাদুর অংশ হিসেবে ছেলেটির দেহে সুই ঢুকিয়ে দিয়েছে। প্রথম সুইটি পাওয়া গেল শিশুটির বাম ফুসফুসের ভিতরে। এক্স-রে করার পর দেখা গেল শিশুটির পেট, গলা, ঘাড় ও পায়ে মোট ৫০টির মতো সুই ঢুকানো হয়েছে। এরপর আর বুঝতে বাকি থাকে না শিশুটি ভয়াবহ ব্ল্যাক ম্যাজিকের শিকার হয়েছে। শিশুটিকে তার এক আত্মীয় হাসপাতালে নিয়ে আসে কিন্তু নিরাপত্তার স্বার্থে তার নাম প্রকাশ করেনি বিখ্যাত ডেইলি মেইল। ছেলেটির মায়ের নাম মারমা সুজা স্যান্তস। তিনি পুলিশকে জানান, যখন তিনি কর্মস্থলে যেতেন তখন শিশুটিকে দেখাশোনা করতেন শিশুটির দাদিমা। কিন্তু কেউ নিশ্চিত নন, শিশুটির দেহে কে সুই ঢুকিয়েছেন। ধারণা করা হয় তার সৎ বাবা এই কাজটি করে থাকতে পারেন কারণ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি ব্ল্যাক ম্যাজিক অনুশীলন করতেন। অভিযুক্ত অভিযোগ অস্বীকার করলেও এ নিয়ে বিস্তারিত তদন্ত চলছে।
👹 যেকোনো প্রশ্ন ও পরামর্শে যোগাযোগ নাম্বার : IMO, 01757786808