ধ্যান ও মনের শক্তি নিজেকে জানা

ধ্যান  ও মনের শক্তি নিজেকে জানা
প্রত্যেক প্রাণীকে পরিচালিত করে তার মন। আর এই
মন এক বিশাল শক্তির আধার। মানুষের মনকে
ইতিবাচক পথে পরিচালিত করার জন্যে সারা পৃথিবী
ব্যাপী মন নিয়ন্ত্রনের নানা কৌশল শেখার চেষ্টা
চালাচ্ছে মানুষ যুগ যুগ ধরে। অতীতে সাধু সন্নাসীরা
ধ্যানের মাধ্যমে মনকে নিয়ন্ত্রণ করে আপাত
দৃষ্টিতে অসাধ্য এমন অনেক কাজ করে মানুষকে চমকে
দিয়েছেন।
অটুট বিশ্বাস ছাড়া কোন কিছু অর্জন করা আসলেই
সম্ভব নয়। মানুষের হাসি কান্না, সুখ দুখ সব অনুভূতিই মন
থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়। মন মানুষকে যেমন ভাল বা
ইতবাচক দিকে পরিচালিত করতে পারে, তেমনি
নেতিবাচক দিকেও। মনের শক্তিতে বলিয়ান হয়ে
মানুষ নানা অসাধ্য সাধন করে।আবার মনের শক্তি
হারিয়ে পরাজয় স্বীকার করে আত্মহত্যাও করে বসে।
মন আসলেই আল্লাহপাকের সৃষ্ট এক রহস্যেভরা
মহাশক্তির আধার। মনকে সঠিকভাবে পরিচালিত
করতে পারলে আমরা সরল ও সঠিক পথে থাকতে
পারবো।
বিশ্বাস থেকে শক্তি পায় মন। পৃথিবীর বিভিন্ন
দেশে মানুষের মনকে নিয়ন্ত্রনের নানা কৌশল
প্রয়োগ হচ্ছে। আমাদের দেশেও কোয়ান্টাম মেথড,
সিলভা মেথড, লীড সহ আরো বেশ কিছু মেথড
প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এসব মেথডের গুরুত্বকে খাটো
করে দেখার উপায় নেই। তবে এর কোনটাই জীবন
ধারনের মেথড বা পদ্ধতি নয়। এ রকমটা যারা বলে
তারা নিঃসন্দেহে মানুষকে কৌশলে ধোঁকা
দিচ্ছেন। এগুলোকে বরং বলা যায়, মানুষের মনকে
পজিটিভ করার কিছু কৌশল মাত্র। জীবন ধারনের
পদ্ধতি অবশ্যই নয়। জীবন ধারনের পরিপূর্ণ পদ্ধতি হলো
ইসলাম। কোরআন ও সুন্নাহর উপর অটুট বিশ্বাস থাকলে
মন এমনিতেই সঠিক পথে পরিচালিত হবে। এর জন্যে
বিশেষ কোন পদ্ধতির প্রয়োজন পড়ে না।
মনকে পজিটিভ পথে পরিচালিত করার কথা ইসলামই
বলে। কুচিন্তা ও ভীরুতা থেকে মুক্তির কথা ইসলামেই
আছে। কোরআন-সুন্নাহ মনকে নিয়ন্ত্রণ করার মহৌষধ।
এরপরও মানুষ নানা ধোঁকায় পড়ে বিভ্রান্ত হয়।
তবে বড়ই বিচিত্র জিনিস এই ‘মন’। পজিটিভ থাকা
সত্বেও অনেক সময় শয়তানের প্ররোচনায় মন দ্রুত
নেগেটিভ পথে হাঁটা শুরু করে দেয়। যে বিশ্বাস
এতোদিন তার মধ্যে শক্তি যুগিয়েছে, সেই মনই আবার
সবকিছু ভেঙ্গে চুরমার করে দিতে সময় নেয় না। মনের
গতি প্রকৃতি নির্ণয় করা তাই কোন মানুষের পক্ষে
সম্ভব নয়।
কিন্তু এসব আমার এখনকার আলোচ্য বিষয় নয়। আলোচ্য
হলো, মনের শক্তি বিশ্বাস। এই বিশ্বাস মানুষকে
কিভাবে শক্তি যোগায় তার একটা বাস্তব ঘটনা শুনুন।
হাজার বছর ধরে মানুষ ৪ মিনিটে ১ মাইল দৌড়ানোর
বহু চেষ্টা করে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিল যে,
মানুষের দৈহিক গঠনের কারনে সেটা একেবারেই
অসম্ভব। মানুষের ফুসফুসের গঠন এবং হাঁড়ের
কাঠামোর জন্যে মানুষ কখনোই ৪ মিনিটে ১ মাইল
দৌড়াতে সক্ষম হবে না। দু’হাজার বছর কেটে গেলো
এভাবেই। তারপর একদিন এলো শুভ দিন। বিশেষজ্ঞরা
গবেষনা করে জানালেন, আগের ধারনা ভুল। এবার
ঘটলো আরো চমকপ্রদ ঘটনা। রজার ব্যনিষ্টার নামের
এক দৌড়বিদ ৪ মিনিটে ১ মাইল দৌড়ে প্রথম বিশ্ব
রেকর্ড স্থাপন করলেন। এর ৬ সপ্তাহের মধ্যে জন
ল্যান্ডি নামের আরেক দৌড়বিদ আরো ২ সেকেন্ড
কম সময়ের মধ্যে ১ মাইল দৌড়ে রজার ব্যনিষ্টারের
রেকর্ড ভেঙ্গে দিলেন। সেই শুরু। এরপর হাজারেরও
বেশী দৌড়বিদ ৪ মিনিটের কম সময়ে ১ মাইল
দৌড়েছেন। এতে একটা বিষয় সুষ্পষ্ট হয়েছে যে, যখন
মানুষ বিশ্বাস করেছে সে পারবে না তখন পারেনি।
আর যখনই বিশ্বাস করেছে সে পারবে তখন ঠিকই
পেরেছে।
মানুষকে তার নিজের বিশ্বাসের শক্তি সম্পর্কে
বোঝাবার জন্যে আমাদের দেশের কোয়ান্টাম
মেথডে এই বিষয়টা ফোকাস করা হয়।
নেতিবাচক বা ইতিবাচক বিশ্বাসগুলো মানুষের মনে
বাল্যকাল থেকেই গেঁথে যায় তথা ইনষ্টল হয়ে যায়।
অনেকটা কম্পিউটারের সফটওয়ার ইনষ্টলের মতোই।
বেশ কিছু নেতিবাচক সফটওয়ার আমাদের অজান্তে
আমাদের অবচেতন মনেও কাজ করে। যার কারনে
আমরা অহেতুক ভয়ে ভীত থাকি। কিছু কুসংস্কার ও
ভীতি মনে ইনষ্টল হয়ে যাবার কারনে মন পজিটিভ
কাজ করার সাহস পায় না।
আমাদের মুরব্বীদের অজ্ঞতার কারনে আমরা
অনেকেই বাল্যকাল থেকেই পীর ফকির ও মাজারের
অলৌকিক ও কল্পিত ক্ষমতায় বিশ্বস্ত হয়ে পড়ি। যার
কারনে কোন বিপদ আপদে মাজারে বা পীর ফকিরের
দরবারে নানাজাতের মানত করে থাকি। কিন্তু আমরা
জানি না যে, এগুলো সরাসরি শির্ক। এসব শির্ক যারা
করে তাদের পরিনাম জাহান্নাম ছাড়া আর কোথাও
নয়। নানা কুসংস্কার যেমন হাঁচি দেওয়া বা খালি
কলসী দেখা কিম্বা কুকুরে ডাকা অনিষ্টের লক্ষণ
বলে মনে করার বিষয়গুলো বাল্যকাল থেকেই মনের
মধ্যে ইনষ্টল হয়ে যায়। আর এই ভুল সফটওয়ারগুলোই
আমাদেরকে সারাজীবন পরিচালিত করে ভুল পথেই।
নিজের অজান্তেই আমরা ধাবিত হই জাহান্নামের
পথে। ভ্রান্ত সফটওয়ারে ভ্রান্ত বিশ্বাসে জীবনটা
ভ্রান্তির মধ্যেই কেটে যায়।
খেয়াল করুন, সার্কাসে জঙ্গলের দুরন্ত এবং বিশাল
শক্তিসম্পন্ন একেকটা হাতিকে কিভাবে পোষ
মানিয়ে ছাগল বাঁধার একটা খুঁটির সাথে বেঁধে
রাখলেও সে আর পালাতে পারে না। বাচ্চা হাতিকে
যখন ধরে আনা হয়, তার পায়ে শিকল দিয়ে শক্ত করে
বেঁধে রাখা হয়। দুরন্ত এই বাচ্চা হাতি শিকল ছেঁড়ার
জন্যে প্রানান্ত চেষ্টা করে। কিন্তু তার ছোট্ট শরীর
দিয়ে এই বাচ্চা হাতিটা সে শিকল ছিড়তে পারে না।
উল্টো তার পা কেটে রক্তাক্ত হয়ে যায়। সে আবার
চেষ্টা করে। রক্তাক্ত পা আরো রক্তাক্ত এবং
বিষাক্ত হয়ে পড়ে। শিকল ছেঁড়া তার জন্যে আরো
বেশী কঠিন হয়ে যায়। এভাবে অনেক চেষ্টা করে এক
সময় সে হার মানে। বন্দিত্বের এই ছয়ফুট গন্ডিকেই
তার নিয়তি হিসেবে মেনে নেয়। ধীরে ধীরে এই
সফটওয়ারটা তার মধ্যে ইনষ্টল হয়ে যায়। পরবর্তী
সময়ে এই বাচ্চা হাতিটা বিশাল দেহের ও শক্তির
অধিকারী হলেও ছাগল বাঁধার একটা খুঁটির সাথে
তাকে বেঁধে রাখলেও সে আর তা ছিঁড়ে পালাবার
সাহস করে না। পায়ে শিকলের টান পড়লেই বুঝে নেয়
তার সীমানা শেষ। এমনও হয়েছে, সার্কাসে আগুন
লাগায় সবাই পালিয়ে গেলেও হাতির পায়ে
শিকলের টান পড়ায় সে আর পালাবার চেষ্টা
করেনি। আগুনে পুড়ে মারা গেছে। অথচ নেতিবাচক
সফটওয়ারটা তার মধ্যে না থাকলে সে ইচ্ছে করলেই
সবকিছু তছনছ করে পালাতে পারতো। কেবল
সার্কাসের হাতি নয়, মানুষ থেকে শুরু করে পৃথিবীর
সমস্ত প্রাণী এরুপ ইতিবাচক বা নেতিবাচক সফটওয়ার
দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। মনোবিজ্ঞানীরা নানা
পরীক্ষা নিরীক্ষা দ্বারা তার প্রমাণ পেয়েছেন।
খেয়াল করে থাকবেন, কিছু মুসলমান নামধারী ব্যক্তি
একদিকে নামাজও পড়েন, আবার মাজার বা পীরের
উপরও বিশ্বাস রাখেন। আবার নিজের কল্যানের জন্য
আল্লাহর কাছে নয়, পীর ফকির এবং তাবিজ কবজের
আশ্রয় নেন। বাল্যকালে এসব ভুল সফটওয়ার তার মধ্যে
ইনষ্টল হওয়ার কারনে সে এমন ভুল পথে পরিচালিত
হচ্ছে। আল্লাহর উপর অটুট বিশ্বাস যদি তার মধ্যে
ভালভাবে ইনষ্টল হতো, তাহলে পৃথিবীর কোন কিছুই
তাকে টলাতে পারতো না। আমি অনেক পীর এবং
আলেমকে দেখেছি যারা কোরআন হাদীসে অনেক
বিশেষজ্ঞ বটে, কিন্তু বাল্যকালের শেখানো
ভুলগুলো তারা শেষ বয়সে এসেও শুধরাতে পারেননি।
মাথার মধ্যে ভুল সফটওয়ার ইনষ্টল থাকায় কোরআন-
হাদীসের কথাগুলো ভালমত আমল করতে পারছেন না।
কাজেই আল্লাহর উপর অটুট বিশ্বাস এবং ইতিবাচক
মনোভাব ছাড়া মনকে সরল ও সঠিক পথে পরিচালিত
করা সম্ভব নয়।
মন্ত গুর জ্বিন সাধনা।

কোন মন্তব্য নেই:

পুরাতন পোষ্ট গুলি দেখুন