তুলসী পাতার গুনা গুন।
সুগন্ধিযুক্ত, কটু তিক্তরস, রুচিকর। এটি সর্দি, কাশি,
কৃমি ও বায়ুনাশক এবং মুত্রকর, হজমকারক ও
এন্টিসেপটিক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে বিশেষ করে
কফের প্রাধান্যে যে সব রোগ সৃষ্টি হয় সে ক্ষেত্রে
তুলসী বেশ ফলদায়ক। মানুষ একসময় প্রকৃতি থেকেই
তাঁর অসুখ বিশুখের পথ্য আহরন করতো। বিভিন্ন গাছ ,
লতা , পাতা বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত হতো।
এসবে কোন পার্স প্রতিক্রিয়া নেই। মানুষ যত আধুনিক
হচ্ছে, এসবকে পরিত্যাগ করছে। তবে চীন এবং ভারতে
এই ভেষজ চিকিৎসা নিয়ে বর্তমানে ব্যাপক গবেষণা
হচ্ছে।
১। নিরাময় ক্ষমতা
তুলসী পাতার অনেক ঔষধি গুনাগুণ আছে। তুলসি পাতা
নার্ভ টনিক ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি কারী। এটা শ্বাস
নালী থেকে সর্দি–কাশী দূর করে। তুলসীর ক্ষত
সারানোর ক্ষমতা আছে। তুলসী পাকস্থলীর শক্তি
বৃদ্ধি করে ও অনেক বেশি ঘাম নিঃসৃত হতে সাহায্য
করে।
২। জ্বর ভালো করে
তুলসীর জীবাণু নাশক, ছত্রাক নাশক ও ব্যাক্টেরিয়া
নাশক ক্ষমতা আছে। তাই এটা জ্বর ভালো করতে
পারে। সাধারণ জ্বর থেকে ম্যালেরিয়ার জ্বর পর্যন্ত
ভালো করতে পারে তুলসী পাতা।
– আধা লিটার পানিতে কিছু তুলসী পাতা ও এলাচ
গুঁড়া দিয়ে ফুটিয়ে নিন
– এক্ষেত্রে তুলসী ও এলাচ গুঁড়ার অনুপাত হবে ১:০.৩
– জ্বাল দিতে দিতে মিশ্রণটিকে অর্ধেক করে
ফেলুন
– মিশ্রণটির সাথে চিনি ও দুধ মিশিয়ে ২-৩ ঘণ্টা পর
পর পান করুন
– এই মিশ্রণটি শিশুদের জন্য অনেক কার্যকরী।
বিভিন্ন প্রকার জ্বরে তুলসীপাতার রসের ব্যবহার
অনেকটা শাস্ত্রীয় বিষয় হিসেবে পরিচিত। বিশেষত
ঋতু পরিবর্তন হেতু যে জ্বর, ম্যালেরিয়া জ্বর এবং
ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসায় এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে
সমাজে। এর জন্য কচি তুলসীপাতা চায়ের সাথে সেদ্ধ
করে পান করলে ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধ
হয়ে থাকে।
*. একিউট জ্বরে তুলসীপাতার সেদ্ধ রসের সাথে
এলাচিগুঁড়া এবং চিনি ও দুধ মিশিয়ে পান করলে দ্রুত
উপকার পাওয়া যায়। গলক্ষতের জন্য তুলসীপাতা
সেদ্ধ পানি পান করলে এবং গারগল করলে ভালো
উপকার পাওয়া যায়।
তুলসী পাতার ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে ফুসফুসীয়
সমস্যায়। ব্রঙ্কাইটিস, অ্যাজমা, ইনফ্লুয়েঞ্জা,
কাশি এবং ঠাণ্ডাজনিত রোগে তুলসী পাতার রস, মধু
ও আদা মিশিয়ে পান করলে উপশম পাওয়া যায়।
ইনফ্লুয়েঞ্জা হলে তুলসী পাতার রস, লবণ ও লবঙ্গ
মিশিয়ে পান করলে ফল পাওয়া যায়। এ ধরনের
রোগের ব্যবহারের জন্য তুলসী পাতা আধা লিটার
পানিতে সেদ্ধ করতে হয় ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষন তা
অর্ধেকে পরিণত হয়।
৩। ডায়াবেটিস নিরাময় করে
তুলসী পাতায় প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও
এসেনশিয়াল অয়েল আছে যা ইউজেনল, মিথাইল
ইউজেনল ও ক্যারিওফাইলিন উৎপন্ন করে। এই উপাদান
গুলো অগ্নাশয়ের বিটা সেলকে কাজ করতে সাহায্য
করে( বিটা সেল ইনসুলিন জমা রাখে ও নিঃসৃত করে)।
যার ফলে ইনসুলিন এর সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায়। এতে
ব্লাড সুগার কমে এবং ডায়াবেটিস ভালো হয়।
৪। কিডনি পাথর দূর করে
রক্তের ইউরিক এসিড-এর লেভেলকে কমতে সাহায্য
করে কিডনিকে পরিষ্কার করে তুলসী পাতা। তুলসীর
অ্যাসেটিক এসিড এবং এসেনশিয়াল অয়েল এর
উপাদান গুলো কিডনির পাথর ভাঙতে সাহায্য করে ও
ব্যাথা কমায়। কিডনির পাথর দূর করার জন্য প্রতিদিন
তুলসী পাতার রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেতে হবে।
এভাবে নিয়মিত ৬ মাস খেলে কিডনি পাথর দূর হবে।
৫। ক্যান্সার নিরাময় করে
তুলসীর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি
কারসেনোজেনিক উপাদান ব্রেস্ট ক্যান্সার ও ওরাল
ক্যান্সার এর বৃদ্ধিকে বন্ধ করতে পারে। কারণ এর
উপাদানগুলো টিউমারের মধ্যে রক্ত চলাচল বন্ধ করে
দেয়। উপকার পেতে প্রতিদিন তুলসীর রস খান।
৬। তুলসীপাতার রস শিশুদের জন্য বেশ উপকারী।
বিশেষত শিশুদের ঠাণ্ডা লাগা, জ্বর হওয়া, কাশি
লাগা, ডায়রিয়া ও বমির জন্য তুলসীপাতার রস ভালো
কাজ করে। জলবসন্তের পুঁজ শুকাতেও তুলসীপাতা
ব্যবহৃত হয়।
৭। মানসিক চাপ কমায়: মানসিক চাপে
অ্যান্টিস্ট্রেস এজেন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, মানসিক অবসাদ
প্রশমনে এমনকি প্রতিরোধে তুলসী চমৎকার কাজ
করে। কোনো সুস্থ ব্যক্তি যদি প্রতিদিন অন্তত ১২টি
তুলসীপাতা দিনে দু’বার নিয়মিত চিবাতে পারেন
তাহলে সেই ব্যক্তি কখনো মানসিক অবসাদে
আক্রান্ত হবেন না বলে গবেষকরা জানিয়েছেন।
কর্টিসলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রেখে মানসিক চাপ
কমিয়ে আনতে সাহায্য করে তুলসি পাতা। স্নায়ু
শিথিল করে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে, যা মানসিক
চাপ সৃষ্টিকারী ফ্রি রেডিকলকে নিয়ন্ত্রণ করে।
অতিরিক্ত অবসাদ এবং মানসিক চাপ অনুভূত হলে ১০
থেকে ১২টি তুলসী পাতা চিবিয়ে খেয়ে নিন, উপকৃত
হবেন।তুলসীর স্ট্রেস কমানোর ক্ষমতা আছে। সুস্থ
মানুষও প্রতিদিন ১২ টি তুলসী পাতা চিবালে স্ট্রেস
মুক্ত থাকতে পারবেন।
৮। মুখের ঘা দূর করতেঃ তুলসী পাতা মুখের আলসার
ভালো করতে পারে। মুখের ঘা শুকাতেও তুলসীপাতা
ভালো কাজ করে। মুখের ইনফেকশন দূর করতে
তুলসীপাতা অতুলনীয়। প্রতিদিন কিছু পাতা (দিনে
দুবার) নিয়মিত চিবালে মুখের সংক্রমণ রোধ করা
যেতে পারে। চর্মরোগে তুলসীপাতার রস উপকারী।
দাউদ এবং অন্যান্য চুলকানিতে তুলসীপাতার রস
মালিশ করলে ফল পাওয়া যায়। ন্যাচার অ্যাথিতে
শ্বেতীরোগের চিকিৎসায় তুলসীপাতার ব্যাপক
ব্যবহার রয়েছে।
৯। মাথা ব্যথা ভালো করতে পারে।এর জন্য চন্দনের
পেস্ট এর সাথে তুলসী পাতা বাটা মিশিয়ে কপালে
লাগালে মাথাব্যথা ভালো হবে।
১২। তুলসী পাতা রক্ত পরিষ্কার করে, কোলেস্টেরল
কমায় ।
১৩। পোকায় কামড় দিলে তুলসীর রস ব্যবহার করলে
ব্যথা দূর হয়।
১৪। ডায়রিয়া হলে ১০ থেকে বারোটি পাতা পিষে
রস খেয়ে ফেলুন।
১৫। তুলসীর বীজ গায়ের চামড়াকে মসৃণ রাখে। বীজ
সেবনে প্রস্রাবের মাত্রা বেড়ে থাকে।
১৬। চোখের ক্ষতে এবং রাতকানা রোগে নিয়মিত
তুলসীপাতার রস ড্রপ হিসেবে ব্যবহারে ফল পাওয়া
যায়। দাঁতের সুরক্ষায় তুলসীপাতা শুকিয়ে গুঁড়া করে
দাঁত মাজলে দাঁত ভালো থাকে। এ ছাড়া সরিষার
তেলের সাথে তুলসীপাতার গুঁড়া মিশিয়ে পেস্ট
বানিয়ে দাঁত মাজলেও দাঁত শক্ত থাকে। মুখের দুর্গন্ধ
রোধে তুলসীপাতার মাজন ভালো ফল দিয়ে থাকে।
১৭। তুলসীর বীজ পানিতে ভিজালে পিচ্ছিল হয়। এই
পানিতে চিনি মিশিয়ে শরবতের মত করে খেলে
প্রস্রাবজনিত জ্বালা যন্ত্রনায় বিশেষ উপকার হয়।
এছাড়াও তুলসী পাতার রস ২৫০ গ্রাম দুধ এবং ১৫০
গ্রাম জলের মধ্যে মিশিয়ে পান করুন ।
১৮। মুখে বসন্তের কাল দাগে তুলসীর রস মাখলে ঐ দাগ
মিলিয়ে যায়। হামের পর যে সব শিশুর শরীরে কালো
দাগ হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে তুলসী পাতার রস মাখলে
গায়ে স্বাভাবিক রং ফিরে আসে।
১৯। মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে দিনে ৪-৫ বার তুলসী পাতা
চেবান ৷
২০। ত্বকের চমক বাড়ানোর জন্য, এছাড়াও ত্বকের
বলীরেখা এবং ব্রোন দূর করার জন্য তুলসী পাতা
পিষে মুখে লাগান ৷
২১। কোন কারনে রক্ত দূষিত হলে কাল তুলসিপাতার রস
কিছুদিন খেলে উপকার পাওয়া যায়। শ্লেষ্মার জন্য
নাক বন্ধ হয়ে কোনো গন্ধ পাওয়া না গেলে সে সময়
শুষ্ক পাতা চূর্ণের নস্যি নিলে সেরে যায়। পাতাচূর্ণ
দুই আঙ্গুলের চিমটি দিয়ে ধরে নাক দিয়ে টানতে হয়,
সেটাই নস্যি।
২২। তুলসি পাতার রসে লবন মিশিয়ে দাদে লাগালে
উপশম হয়।
২৩। যদি কখনও বমি কিংবা মাথা ঘোরা শুরু করে,
তাহলে তুলসী রসের মধ্যে গোলমরিচ মিশিয়ে খেলে
বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।
২৪। সকালবেলা খালি পেটে তুলসী পাতা চিবিয়ে
রস পান করলে খাবার রুচী বাড়ে।
২৫। ঘা যদি দ্রুত কমাতে চান তাহলে তুলসী পাতা এবং
ফিটকিরি একসঙ্গে পিষে ঘা এর স্থানে লাগান,
কমে যাবে ৷
২৬। তুলসী মূল শুক্র গাঢ় কারক। তুলসী পাতার ক্বাথ,
এলাচ গুঁড়া এবং এক তোলা পরিমাণ মিছরী পান
করলে ধাতুপুষ্টি সাধিত হয় যতদিন সম্ভব খাওয়া যায়।
এটি অত্যন্ত ইন্দ্রিয় উত্তেজক। প্রতিদিন এক ইঞ্চি
পরিমাণ তুলসী গাছের শিকড় পানের সাথে খেলে
যৌনদূর্বলতা রোগ সেরে যায়।
২৭। চোখের সমস্যা দূর করতে রাতে কয়েকটি তুলসী
পাতা পানিতে ভিজিয়ে রেখে ওই পানি দিয়ে
সকালে চোখ ধুয়ে ফেলুন।
২৮। শরীরের কোন অংশ যদি পুড়ে যায় তাহলে তুলসীর
রস এবং নারকেলের তেল ফেটিয়ে লাগান, এতে
জ্বালাপোড়া কমে যাবে। পোড়া জায়গাটা
তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাবে এবং পোড়া দাগ ওঠে
যাবে।
২৯। চর্মরোগে তুলসী পাতা দূর্বাঘাসের ডগার সংগে
বেটে মাখলে ভালো হয়ে যায়।
৩০। পেট খারাপ হলে তুলসীর ১০ টা পাতা সামান্য
জিরের সঙ্গে পিষে ৩-৪ বার খান ৷ হাগু একেবারে
বন্ধ হয়ে যাবে!!! মানে পায়খানার ওই সমস্যাটা আর
কি!
৩১। মানবদেহের যেকোনো ধরনের সংক্রমণ
প্রতিরোধে তুলসীর পাতা অনন্য। এতে রয়েছে
জীবাণুনাশক ও সংক্রমণ শক
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন